শুক্রবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

আবারও মা হচ্ছে প্রিন্সেস

মোস্তফা কাজল

আবারও মা হচ্ছে প্রিন্সেস

বহুল আলোচিত অতি দুর্লভ ম্যাকাও পাখি প্রিন্সেস আবারও মা হচ্ছে। গতকাল ভোরে প্রায় দুই বছর পর একটি ডিম দিয়েছে। একটি ম্যাকাও পাখি জীবনে দুবার ডিম দেয়। একবার সংসার বাঁধে। কিন্তু প্রিন্সেসের সংসার আইনি কারণে দুবার হয়েছে। ফলে প্রিন্সেসের জীবন রূপকথাকেও হার মানায়। তার প্রথম সঙ্গীর নাম ছিল প্রিন্স। ২০১০ সালে প্রতিপালনে ব্যর্থ হয়ে প্রিন্সকে তার মালিক ইকরাম সেলিম রাজধানীর ২২/২, হাতিরপুলে আবস্থিত ফিকামলি পাখি চিড়িয়াখানায়ার মালিক ড. আবদুল ওয়াদুদকে উপহার দেন। পরে পাখিটির একাকিত্ব কাটানোর জন্য ব্রাজিল থেকে আরেকটি মেয়ে পাখি নিয়ে আসেন ড. ওয়াদুদ। নাম দেন প্রিন্সেস। একসঙ্গে থাকার কারণে প্রিন্স ও প্রিন্সেসের মধ্যে সখ্য গড়ে ওঠে। এরপর দুই বছরের মধ্যে তাদের সংসারে প্রথমবার ৭টি বাচ্চার জন্ম হয়। এ সময় ইকরাম সেলিম আদালতে মামলা করে প্রিন্স পাখিটি ফেরত চান। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি প্রিন্স ও প্রিন্সেসের সংসার ভেঙে যায়। প্রিন্সকে নিয়ে যান ইকরাম সেলিম। পরে ড. আবদুল ওয়াদুদ প্রিন্স এবং প্রিন্সেসের সংসার জোড়া লাগাতে মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন। পাখির সংসার রক্ষা নিয়ে মামলা বিশ্বে এক নজিরবিহীন ঘটনা। ওই মামলায় আদালত থেকে কোনো সুরাহা না হওয়ায় ড. আবদুল ওয়াদুদ আরও একটি পুরুষ ব্লু-গোল্ড ম্যাকাও পাখি আর্জেন্টিনা থেকে সংগ্রহ করেন। নাম দেন আলেকজান্ডার। পরে প্রিন্সেস ও আলেকজান্ডারের মধ্যে নতুন সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ম্যাকাও পাখি কোনো সঙ্গীর সঙ্গে একবার জোড়া বাঁধলে আমৃত্যু একসঙ্গে থাকে। তাই আলেকজান্ডারের সঙ্গে জোড়া বাঁধা নিয়ে নানা ধরনের বেগ পেতে হয়। জানতে চাইলে প্রিন্সেস ও আলেকজান্ডারের মালিক এবং পাখি বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল ওয়াদুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পাখি দম্পতির সার্বিক দিক বিবেচনা করে খাঁচার ভিতর প্রাকৃতিক আবহ সৃষ্টির জন্য ঝরনা তৈরি করা হয়। বনের পরিবেশের সঙ্গে মিল রেখে কৃত্রিম গাছ-গাছালি রাখা হয় এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর বার্ড পার্কের সহকারী কিউরেটর পোষা পাখি বিশেষজ্ঞ মিস এনজেলিন লিমের পরামর্শ ও মতামত নেওয়া হচ্ছে। এভাবেই রক্ষা করা হয় তাদের সম্পর্ক। এরপর খাদ্য তালিকায় পরিবর্তন আনা হয়। এগফুড ও বাদাম জাতীয় খাবার কমিয়ে বিভিন্ন প্রকার ফল জাতীয় খাবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়। নিজস্ব প্রক্রিয়ায় তৈরিকৃত গ্রিট খাদ্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মিনারেল ব্লক, ক্যাটল ফিশ বোন, পানির পাশাপাশি মাল্টার ফলের রস নিয়মিত দিয়ে আগের ফিটনেস ঠিক রাখা হচ্ছে। প্রকৃতিতে ব্লু-গোল্ড ম্যাকাও পাখি আমাজন অববাহিকার গভীর জঙ্গলে বাস করে। এরা বড় বড় পাইন গাছের কোঠরে বাসা বাঁধে। এদের  আয়ুষ্কাল ৬০ থেকে ৭০ বছর। এরা বীচি ও ফল জাতীয় খাবার খায়। সারা পৃথিবীতে ব্লু-গোল্ড ম্যাকাও পাখি শোপিস কেইজ বার্ড হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়।

সর্বশেষ খবর