বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
২০১৬ সালতামামি

শেয়ারবাজার কারসাজিতে কিছুই পাননি বিনিয়োগকারী

আলী রিয়াজ

বছরজুড়েই কারসাজিতে ছিল শেয়ারবাজার। ব্রোকার হাউস, কোম্পানির পরিচালকরা মিলে কারসাজির সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন। কোনো কিছুতেই এই সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি বিএসইসি। সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই শেয়ারের দর ওঠানামা করেছে। ভুয়া আর্থিক প্রতিবেদন, মিথ্যা তথ্যগুজব ছড়িয়ে শেয়ারের দর নিয়ন্ত্রণ করে সিন্ডিকেটের পকেটে গেছে কোটি কোটি টাকা। ফলে ২০১০ সালে ভয়াবহ দরপতনে পুঁজি হারানো লাখ লাখ সাধারণ বিনিয়োগকারী কিছুই পাননি। ২০১৬ সালে সাতটি নতুন কোম্পানি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হলেও বাজার মূলধন বা সূচকে কোনো প্রভাব পড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে আস্থা আসতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ ছিল না। ২০১০ সালের পর যে আস্থার সংকট শুরু হয়েছে, তা এখনো কাটানো সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থা। ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা কোনো সুফল পাননি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে শেয়ারবাজার লেনদেন শুরু হয় ৪ হাজার ৬ পয়েন্ট দিয়ে। এরপর শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে নতুন সাতটি কোম্পানি। কিন্তু ডিএসইএক্স সূচক এই এক বছরে মাত্র ৩০০ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ ডিএসইএক্স সূচক দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৯৯৩ পয়েন্টে। এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইর বাজার মূলধন বেড়েছে মাত্র ২৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল তিন লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা। বছরের শেষে তা দাঁড়িয়েছে তিন লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকায়। এই বাজার মূলধনের মুনাফার অধিকাংশ অর্থই চলে গেছে সিন্ডিকেটের পকেটে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর ৩০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শেয়ার জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। বাজারে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে শেয়ারদর বৃদ্ধি করা, বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার বিক্রি করে দেওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। শেয়ারদর বৃদ্ধির জালিয়াতিতে ন্যাশনাল পলিমারের পরিচালকরা জড়িত। কোম্পানিটির পরিচালকরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ার লেনদেন করেছেন নিজেদের মধ্যেই। এ অপরাধে কোম্পানির পরিচালকদের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানাও করে বিএসইসি। গুজব ছড়িয়ে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে আটটি কোম্পানির পরিচালকরা মিলে শেয়ারদর দ্বিগুণ, তিনগুণ করেছেন। এর মধ্যে বন্ধ কোম্পানিও রয়েছে। এ কোম্পানিগুলো হলো রহিমা ফুড, ফাইন ফুড, বিডি অটোকারস, মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজ, মেঘনা কনডেন্সড মিল্ক, জিল বাংলা সুগার, ইমাম বাটন ও শ্যামপুর সুগার। এসব কোম্পানির পরিচালকরা যৌথভাবে নিজেদের মধ্যে শেয়ার লেনদেন দেখিয়ে দর বৃদ্ধি করেছেন। দর বৃদ্ধি পাওয়ার পর পরিচালকরা সব শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। আইন ভঙ্গ করে এসব কোম্পানির শেয়ারে মার্জিন ঋণও নিয়েছেন তারা। সবগুলো কোম্পানি জেড ক্যাটাগরির ও দুই বছর ধরে কোনো মুনাফাই করতে পারেনি। এ ছাড়া সাফকো স্পিনিং, শাহজিবাজার পাওয়ারের পরিচালকরা ইক্যুইটির মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ারবাজারে নিজেরাই ব্যবসা করেছেন। আনোয়ার গ্যালভানাইজিং মিথ্যা তথ্য দিয়ে শেয়ারদর বৃদ্ধি করে শতকোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল কোনো মুনাফা না করেই ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে, যা ছিল পুরোপুরি জালিয়াতি। শেয়ারের দর বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে তারা এ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে। এসব অনিয়ম-জালিয়াতিতে জড়িত ছিলেন ব্রোকারেজ হাউসের মালিকরা। বিএসইসি সরাসরি শেয়ার জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। এগুলো হলো হ্যাক সিকিউরিটিজ, সুপার সিকিউরিটিজ, সিআরএসএল সিকিউরিটিজ, অ্যারিনা সিকিউরিটিজ, সিনহা সিকিউরিটিজ, ভিশন ক্যাপিট্যাল এবং এসআর ক্যাপিটাল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর