সোমবার, ২৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ থেকে ফিরলে পুনর্বাসন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিপথগামীরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ছেড়ে সুপথে ফিরলে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা ও পুনর্বাসন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, আজ যারা বিপথে যাচ্ছে, তারা যেন বিপথ ছেড়ে সুপথে ফিরে আসে। তাদের জীবন ও জীবিকার জন্য যা যা প্রয়োজন, সরকার তার সব কিছুই করবে। তিনি বলেন, এভাবে আত্মহননের পথ, জঙ্গিবাদ কিংবা সন্ত্রাসের পথ যেন তারা বেছে না নেয়। গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। কঠোর হাতে তা আমরা দমন করব।   

শিক্ষার্থীরা যাতে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসে সম্পৃক্ত না হয়, সেদিকে আরও বেশি করে নজর দেওয়ার জন্য অভিভাবক ও শিক্ষকদের তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই, আমাদের সন্তানরা মন দিয়ে লেখাপড়া করবে। বাবা-মা ও অভিভাবকদের কথা শুনবে, শিক্ষকদের কথা শুনবে। আর মাদক কিংবা কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে না। তিনি বলেন, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন উন্নত জীবন পায়। সৎ চরিত্রের অধিকারী হয়, লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়। আসুন, সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে কাজ করি। আমাদের বর্তমানকে আমরা উৎসর্গ করি আমাদের শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য।

স্টেডিয়ামে উপস্থিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, একটা কথা মনে রাখবে— ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যের ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। ইসলাম কখনো মানুষ হত্যা কিংবা আত্মহননের কথা বলেনি। বরং ইসলাম ধর্ম বলেছে আত্মঘাতী হওয়া কিংবা আত্মহনন মহাপাপ, গুনাহর কাজ। যারা আত্মহনন করে, তারা কখনো জান্নাতে যায় না, জাহান্নামে যায়। তারা কখনো বেহেশতে যেতে পারে না। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য তৈরি হতে শিশু-কিশোরদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের প্রজন্মই আগামীদিনে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবে। আজকের শিশুরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। আমি যেমন প্রধানমন্ত্রী হয়েছি; আজকে যারা শিশু, আগামীদিনে তাদের মধ্য থেকেই কেউ না কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে। মন্ত্রী হবে, সেনাসহ বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা হবে। সুতরাং নিজেদের সেভাবেই গড়ে তুলতে হবে। সোনার বাংলা গড়তে সোনার ছেলেমেয়ে হিসেবে গড়ে উঠতে হবে। ঢাকা জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার জেলা প্রশাসক মো. সালাউদ্দিন অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। এ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ও সাত বীরশ্রেষ্ঠের প্রতিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধসহ দেশের নানা প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী দিয়ে মনোরমভাবে সাজানো হয় স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে ভিকারুন্নেছা নূন স্কুল ও কলেজের ছাত্রীরা ডিসপ্লের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সাফল্যের বিবরণ তুলে ধরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল ৮টায় জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের পর অভিবাদন মঞ্চে দাঁড়িয়ে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে শিশু-কিশোর সমাবেশ ও কুচকাওয়াজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী প্যারেড কমান্ডার শেখ আমিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজের সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন। শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বক্তৃতা দেওয়ার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিশু-কিশোর সংগঠনের পরিবেশনায় মার্চপাস্ট ও মনোজ্ঞ ডিসপ্লে উপভোগও করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম, স্বাধীনতা ঘোষণা, মুক্তিযুদ্ধ, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের উল্লেখ করে বলেন, আমরা চাই, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। কেননা জাতির পিতা তার ৭ মার্চের ভাষণেই বলে গিয়েছিলেন— ‘বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না’। অনেকেই চেষ্টা করেছে, কিন্তু দাবিয়ে রাখতে পারেনি। আমাদের লক্ষ্য এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। আমরা লাখো শহীদের রক্তে স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলতে চাই। তিনি বলেন, জাতির পিতা বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের কাছে উন্নয়নের রোলমডেল। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ হবে সবচেয়ে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। ২০২১ সালের মধ্যে এ দেশ হবে মধ্যমআয়ের দেশ। ইনশা আল্লাহ আমরা সেটি করতে পারব।

সর্বশেষ খবর