রবিবার, ৭ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

বন্ড নয়, ঘাটতি মেটানো হবে বাজেটেই

সাত ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক অর্থ বিভাগের

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাজারে বন্ড ছেড়ে মূলধন সংকট কাটানোর জন্য সরকারের একাধিক ব্যাংক পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাজেট থেকে টাকা দিয়েই আপাতত সেই সংকট মোকাবিলা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে সাত ব্যাংকের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক করেছে অর্থ বিভাগ। ওই বৈঠকেই প্রাথমিকভাবে এ সিদ্ধান্ত হয়। সাত ব্যাংক নিয়ে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান জানান, বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ আছে শিগগিরই তা ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি পূরণে দেওয়া হবে। জানা গেছে, চলতি বাজেটে ব্যাংকের মূলধন পুনর্গঠনে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা আছে। এই টাকাই ভাগ-বাটোয়ারা করে দেওয়া হবে ব্যাংকগুলোকে।

সূত্র জানায়, এর মধ্যে যেসব ব্যাংক বন্ড ছেড়ে বাজার থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে চেয়েছিল এবং তারা যে শর্ত দিয়েছিল প্রস্তাবপত্রে, সেখানে কিছু জটিলতা রয়েছে বলে মনে হচ্ছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে।

 বিশেষ করে বন্ডের বিপরীতে সরকারের যে গ্যারান্টি চাওয়া হয়েছে, সেই গ্যারান্টি কীভাবে, কী শর্তে দেওয়া হবে, তা নিয়েই এই জটিলতা। ফলে বন্ডের পথে না হেঁটে বাজেটের টাকা দিয়েই সমাধানের পথে হাঁটছে মন্ত্রণালয়। এর আগে গত বছর বেসিক ও রূপালী ব্যাংক ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করার প্রস্তাব পাঠায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে। এর মধ্যে বেসিক ব্যাংক ২ হাজার ৬০০ কোটি এবং রূপালী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যুর আবেদন জানায়। এ ছাড়া মূলধন ঘাটতি রয়েছে এমন ব্যাংকগুলো হচ্ছে সোনালী, রূপালী, বিকেবি (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) ও রাকাব (রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক)। এর মধ্যে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবে শুধু বিকেবির মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ৫ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে বৈঠকে মূলধন সংকট নিয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান আলোচনা করেন। সেখানে সরকারের মালিকানাধীন সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, বেসিক, বিকেবি, রাকাব ও প্রবাসীকল্যাণ এই সাত ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ছিলেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া ব্যাংকগুলো পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে তাদের পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। এখন বাজেট থেকে কাকে কত টাকা দেওয়া হবে তা নির্ধারণ করতে আরেকটি বৈঠক হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বর, ২০১৬ ভিত্তিক হিসাবে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে একমাত্র বিডিবিএল ব্যাসেল-৩ অনুযায়ী মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবের ভিত্তিতে সামগ্রিক ব্যাংক খাতের মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের অবস্থা উন্নত নয়। সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির কারণে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকিং খাতের মোট শ্রেণিকৃত ঋণের ৪৯ শতাংশ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের।

সর্বশেষ খবর