শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

রাশিয়ার নকশা মেনে তৈরি হবে রূপপুর বিদ্যুৎ কেন্দ্র

জিন্নাতুন নূর, রাশিয়া থেকে ফিরে

রাশিয়ার নভোভোরোনেজ এনপিপি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নকশা ও প্রযুক্তি মেনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হবে। রাশিয়ার ভেরোনেজ অঞ্চলের বিশাল এলাকাজুড়ে নির্মিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক। এটি বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র যার পানি নিয়ন্ত্রিত এবং এতে ঠাণ্ডা পানির (ভিভিইআর) রিঅ্যাক্টর (পারমাণবিক চুল্লি) আছে। তাছাড়া পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক থ্রি প্লাস প্রযুক্তি এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যুক্ত করা হয়েছে।

পারমাণবিক জ্বালানি খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, রাশিয়ান প্রযুক্তির তৈরি নভোভোরোনেজ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পারমাণবিক বিদ্যুৎ খাতের সবচেয়ে শক্তিশালী রিঅ্যাক্টর ব্যবহূত হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নতুন ইউনিটের কাজ শেষ হলে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাকে দ্বিগুণ করবে। তখন এই কেন্দ্র থেকে বার্ষিক ২৬ বিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে। গত ১৯ জুন রাশিয়ার মস্কোয় অনুষ্ঠিত এটম এক্সপো উপলক্ষে দেশটির রাষ্ট্রীয় সংস্থা রোসাটম বাংলাদেশসহ বিশ্বের একশ দেশের সাংবাদিকদের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শনের  আয়োজন করে। তখন নভোভোরোনেজ এনপিপি-২ এর থ্রি প্লাস জেনারেশন পাওয়ার ব্লক নং ১ (ব্লক নং-৬) পরিদর্শন করানো হয়। এ ছাড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নতুন ইউনিট, কুলিং টাওয়ার, রিঅ্যাক্টর হল, প্রধান কন্ট্রোল রুম ও টারবাইন হলসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থান সাংবাদিকরা পরিদর্শন করেন। পরে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

জানতে চাইলে নভোভোরোনেজ এনপিপি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার ইগোর গুসেভ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নকশা এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যে নিরাপত্তা নিশ্চিতই এর মূল উদ্দেশ্য। এর নকশা মানবসৃষ্ট ও প্রাকৃতিক উভয় দুর্যোগ থেকেই রক্ষা করবে। তবে কুলিং টাওয়ার পরিদর্শনের সময় আশপাশের জায়গাগুলোতে কোনো জনবসতি দেখা যায়নি। এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্মকর্তা ভ্লাদিমির জারুবেভ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিন কিলোমিটারের মধ্যে বসতি থাকা যাবে না। পরে সাংবাদিকদের নিয়ে যাওয়া হয় কেন্দ্রটির টারবাইন হলে। সেখানকার শিফট অপারেটর আনবেন ক্লায়েভ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একই ধরনের টারবাইন বাংলাদেশের রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও ব্যবহূত হবে। এক্ষেত্রে আগুন থেকে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে সে জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণের সঙ্গে জড়িতরা জানান, ওই এলাকার প্রায় ৮৫ ভাগ বিদ্যুতের চাহিদা এ কেন্দ্রের মাধ্যমে মেটানো হয়। কেন্দ্রটি ২১টি বড় কোম্পানি ও ২৩ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাচ্ছে। যাত্রা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পাঁচশ বিলিয়ন কিলোওয়াট আওয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়েছে। তারা আরও জানান, আন্তর্জাতিক এটোমিক এনার্জি এজেন্সির মানদণ্ড মেনেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রটির সলিড রেডিওঅ্যাক্টিভ বর্জ্য পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে একটি নিরাপদ কমপ্লেক্সে আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এর নতুন ইউনিটগুলোর জন্য হাই স্পিড (তিন হাজার রেভ্যুলেশন পার মিনিট) ১২০০ মেগাওয়াটের টারবাইন ব্যবহূত হচ্ছে। ১৯৬৪ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কমিশনিং শুরু হয়। এ কেন্দ্রটির মোট ৬টি ইউনিট। এর দ্বিতীয় ইউনিট (ভিভিইআর-৩৬৫) ১৯৬৯ সালে, ৩য় ও ৪র্থ ইউনিট (ভিভিইআর-৪৪০) ১৯৭১ ও ৭২ সালে, ইউনিট ৫ (ভিভিআর-১০০০) ১৯৮০ সালে, এনভিএনপিপি-২ ইউনিট ১ (ইউনিট-৬) ২০১৭ সালে কমিশনিং শুরু হয়। ২০ বছর পরিচালনার পর ৮৪ সালে ইউনিট-১ পুরোপুরি এবং ১৯৯০ সালে ইউনিট ২ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৬ সালে বন্ধ হয় ইউনিট-৩। বর্তমানে এর তিনটি বিদ্যুৎ ইউনিট চালু আছে। একটি ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।

সর্বশেষ খবর