শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

অভিযুক্ত ৬ আনসারসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

ঢামেকে কিশোরীকে গণধর্ষণ

মাহবুব মমতাজী

গণধর্ষণের ঘটনায়  ৬ আনসার সদস্যসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তবে আসামিদের মধ্যে দুজন ছাড়া বাকিরা পলাতক। ঘটনার ৭ মাস পার হলেও তারা গ্রেফতার হননি। গত বছরের ২৬ অক্টোবর ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বহির্বিভাগের একটি রুমে আটকে রেখে এক কিশোরীকে গণধর্ষণ করে সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা। অভিযুক্তরা হলেন— এপিসি একরামুল, আনসার সদস্য আনিসুল, আতিকুল, সিরাজ, বাবুল ও মিনহাজ। এদের মধ্যে আতিকুল ও একরামুল কারাগারে। বাকিরা পলাতক রয়েছেন।

তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পরই আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানিয়েছিলেন আনসার-ভিডিপির পরিচালক (নিয়ন্ত্রণ) হীরা পারভেজ।

জানা যায়, হাসপাতালের ক্যানসার ডিপার্টমেন্টের বহির্বিভাগের নিচতলার একটি রুমে ধর্ষণের শিকার হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে ওই কিশোরী।  প্রথমে তাকে গাইনি ওয়ার্ডে পরে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। রাজধানীর মিরপুরে থাকতো ওই কিশোরী। তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনায়।

ঘটনাটি জানাজানির পর গত ২ নভেম্বর বিকালে ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী শাহবাগ থানায় ৬ আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পরই আনসার সদস্য আতিকুল ইসলামকে গ্রেফতার করা হয়।  পরের দিন তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ডে নেয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবুল কালাম আজাদ। রিমান্ড শেষে গত বছরের ৮ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আতিকুল। ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদুল হাসান এ আসামির জবানবন্দি রেকর্ড করেন বলে জানায় আদালত সূত্র। মামলার তদন্ত শেষে গত ১২ মার্চ ৬ আনসারসহ মোট ৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, আতিকুল ইসলাম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বিচারকের কাছে বলেছেন, আমি ঢাকা মেডিকেলের আনসার ক্যাম্পে গত দেড় বছর ধরে কর্তব্যরত আছি। গত বছরের ২৬ অক্টোবর মেডিকেলের আউট ডোর এলাকায় আমার টহল ডিউটি ছিল রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত। ডিউটি কমান্ডার ছিলেন এপিসি একরামুল। আমার ডিউটি ছিল আনসার সদস্য বাবুলের সঙ্গে। আনসার সদস্য মিনহাজের ডিউটি ছিল ইমার্জেন্সির গেটে। মিনহাজ তার নামে ইস্যু করা শটগানটা ইমার্জেন্সি গেটের পাশের ওটি রুমে ডিউটিতে থাকা আনসার সদস্য রাশেদের কাছে রেখেছিল। আনসার সদস্য সিরাজ নাক, কান, গলা বিভাগের ডিউটিতে ছিল। আমি অস্ত্রসহ সরকারি পোশাকে ডিউটি করছিলাম। রাত ১২টায় একটা মেয়ে মেডিকেলের নতুন ভবনের সামনে আসে। মেয়েটার বয়স আনুমানিক ১৮-২০ বছর। মেয়েটার হাতে ফুলের তোড়া ছিল। মেয়েটার পরনে লাল রঙের ছাপ-ছাপ থ্রি-পিস। মেয়েটার সঙ্গে ছিল একটা ছেলে। ছেলেটার বয়স প্রায় ২৫ বছর। ছেলেটাকে প্রথমে ইমার্জেন্সি গেটের একজন পুলিশ আটকে ইমার্জেন্সি গেটে ডিউটি করা আনসার সদস্য মিনহাজের হাতে দেয় এবং বলে যে, মেয়েটার সঙ্গে ছেলেটার পরিচয় সায়েদাবাদ বাসস্ট্যান্ডে। ছেলেটা মেয়েটাকে নিয়ে হোটেলে তিন দিন রাখে। এ জন্য মেয়েটা ছেলেটাকে গালিগালাজ করে। মেয়েটা তখন বলে যে, তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা আছে। মেয়েটা চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে এসেছে। তখন বাবুল মেয়েটাকে টাকার বিনিময়ে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেয়। সেখানে আমিও ছিলাম। পরে মেয়েটাকে নিয়ে মিনহাজ আউটডোরের থেরাপির বাইরের পশ্চিম পাশের বারান্দার কোনায় নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। আমি ও বাবুল বিষয়টি দেখে ফেলি। বাবুল ওদের কিছু বলেননি। আমি নিষেধ করেছি। তখন এপিসি একরামুল এসে বলে যে, সে পারমিশন দিয়েছে এবং আমাকে চুপ থাকতে বলে। তখন আমি চুপ হয়ে যাই। এর মধ্যে মিনহাজের শেষ হয়, পরে বাবুল মেয়েটাকে থেরাপির রুমে নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করে। তারপরে থেরাপি রুমে গিয়ে আমিনুল ওই কাজ শেষ করে। তখন আউট ডোরের একজন স্টাফ এবং অ্যাম্বুলেন্সের একজন ড্রাইভার আসে যাদের নাম আমি জানি না কিন্তু দেখলে চিনতে পারব। তখন এপিসি একরামুল তাদের বলে যে, আপনারা কিছু বলিয়েন না। পরে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারও ওই মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। ড্রাইভার টাকা দিতে চাইলে মেয়েটা টাকা নেয়নি। পরে সিরাজও একইভাবে মেয়ের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে। এরই মধ্যে ভোর ৬টা বেজে গেলে আমি হাতিয়ার জমা দিয়ে ক্যাম্পে ঘুমিয়ে যাই। সকাল ১০টার দিকে আমি খবর পাই যে, ক্যাম্প কমান্ডার জজ আমাদের ডাকছে। গিয়ে দেখি ওই মেয়েটা ক্যাম্প কমান্ডারের অফিস রুমের ভিতরে। ক্যাম্প কমান্ডার মেয়েটাকে জিজ্ঞাসা করে কে কে তোমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। তখন মেয়েটা হাত দিয়ে তাদেরকে দেখিয়ে দেয়। কিন্তু আমাকে দেখায়নি এবং আমার কথাও বলেনি। পরে আমি কমান্ডারকে সব খুলে বলি। তখন আমি বলেছিলাম যে, আমি ডিউটি কমান্ডার এপিসি একরামুলকে নিষেধ করেছিলাম কিন্তু সে আমাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। তখন ক্যাম্প কমান্ডার জজ মিয়া এবং পিসি জাহিদ ঘটনার বিষয়ে বিচার করে। পরে ক্যাম্প কমান্ডার জজ ওই মেয়েটাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসতে বলে এবং এপিসি একরামুল গাড়িতে তুলে দিয়ে আসে। মেয়েটা আবার বিকাল ৫টার সময় ঢাকা মেডিকেলে এসে টিকিট কেটে নতুন ভবনে আট তলায় ভর্তি হয়। পরে যেসব আনসার সদস্য ধর্ষণ করেছে তারা সবাই পালিয়ে যায়। আমাকেও পালাতে বলে। আমি পালাইনি। পিসি জজ, কমান্ডার জাহিদ এবং আনসার থানা অফিসার দুলাল পলাতকদের চাকরি থেকে রিজাইন দেওয়ার জন্য বললে তারা রিজাইন দিয়ে চলে যায়। আমি রিজাইন দিতে রাজি না হওয়ায় আমাকে পুলিশে ধরিয়ে দেয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর