শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঈদেও নিম্নমুখী রেমিট্যান্স, এখনো প্রবাসীদের ভরসা হুন্ডি

আলী রিয়াজ

প্রতিবছর ঈদকে ঘিরে প্রবাসীরা বাড়তি অর্থ পাঠান। এ বছর ঈদুল ফিতরেও প্রবাসীরা সে তুলনায় রেমিট্যান্স পাঠাননি। ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো রেমিট্যান্সের নিম্নগতি ছিল চলতি বছরের ঈদেও। ব্যাংকের বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে প্রবাসীদের এখনো ভরসা হুন্ডিতে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে হুন্ডি। এ বছর অবৈধ বা মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কি পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে সে হিসাব বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই। চলতি অর্থবছরের শেষ মাস জুনে এ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১০ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। গত বছরের একই সময়ে এসেছিল ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা।

জানা গেছে, সারা বছর যে পরিমাণ রেমিট্যান্স আসে ঈদুল ফিতরের সময় তার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু এ বছর সেই প্রভাব ছিল খুবই সামান্য। চলতি অর্থবছরের অন্যান্য মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও গত বছরের তুলনায় তা এক হাজার কোটি টাকা কম এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে শেষ মাস জুনে দেশের রেমিট্যান্স এসেছে ১০৫ বিলিয়ন টাকা অর্থাৎ ১০ হাজার ৫০ কোটি টাকা। ঈদ উপলক্ষে রেমিট্যান্স প্রবাহ অন্যান্য মাসের তুলনায় অবশ্য কিছুটা বেড়েছে। গত মে মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ১০২ বিলিয়ন বা ১০ হাজার ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এই সময় রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র কয়েক কোটি টাকা। আগের বছর ২০১৬ সালের জুনে ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১ হাজার ৪০০ কোটির বেশি।  আগের বছর ঈদে রেমিট্যান্স এসেছিল প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। ২০১৭ সালের ছয় মাসে দেশে মোট রেমিট্যান্স এসেছে প্রায় ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭ হাজার ৯০০ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ৭ হাজার ৪০০ কোটি, মার্চে ৮ হাজার ৫০০ কোটি, এপ্রিলে ৮ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যা চার হাজার কোটি টাকা কম। গত বছর একই সময় মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ৫৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ নিম্নমুখী। বিশেষ করে ২০১৫ সালের পর মোবাইল ব্যাংকিং সম্প্রসারিত হওয়ায় সরাসরি ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে থাকে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বেগ প্রকাশ করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ওপর কঠোর নজরদারি আরোপ করে। কয়েকটি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনে সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এতে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও রেমিট্যান্সের স্বাভাবিক গতি পায়নি। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে প্রতি মাসে ব্যাপকভাবে কমেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ব্যাংকিং চ্যানেলেই এখন মানুষ রেমিট্যান্স পাঠাতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো অনেক বেশি নিরাপদ। সাম্প্রতিক সময় বেশকিছু কারণে রেমিট্যান্স কমেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক এ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করেছে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক দেশের আর্থিক সক্ষমতা ও স্থিতিশীল পরিস্থিতি থাকায়  রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক বেড়েছে। আমরা আশা করি আগামীতে আরও বাড়বে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, যেভাবে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে হুন্ডি হচ্ছে তাতে মানুষ কেন ব্যাংকে যাবে? এ ছাড়া ব্যাংকে নানা ধরনের হয়রানির অভিযোগও রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক প্রবাসীদের জন্য বিশেষ ডেস্ক খোলার নির্দেশ দিয়েছে। এটা পরিপালন হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। সার্বিকভাবে রেমিট্যান্স বাড়াতে হলে প্রবাসীদের অর্থের বিশেষ সুবিধা দিতে হবে। এক্ষেত্রে প্রবাসীদের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার দর কিছুটা বেশি দেওয়া যেতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর