ঝিনাইদহে চারটি সংসদীয় আসনে (৮১, ৮২, ৮৩ ও ৮৪) বইছে নির্বাচনী হাওয়া। সবকটিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র লড়াই হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে উভয় দলের প্রার্থীরা মাঠে তত্পরতা শুরু করে দিয়েছেন।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঈদ শুভেচ্ছা কার্ড, রমজানের ইফতার মাহফিলসহ লিফলেট, পোস্টার বিতরণসহ নানাভাবে চলছে প্রচারণা কার্যক্রম। সবচেয়ে বেশি আলোচিত আসন হচ্ছে ঝিনাইদহ-২। এ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগে সদ্য যোগ দেওয়া মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠন, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির। তার বিপরীতে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি মশিউর রহমান। কার্যত, এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে তরুণ তাহজীবের সঙ্গে প্রবীণ মসিউরের।
আগামী সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের জন্য ত্রিমুখী যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে। এ আসন থেকে বরাবর শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই এমপি। তার রয়েছে তৃনমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক। কিন্তু তাকে টেক্কা দিতে হঠাৎ করেই নির্বাচনী তত্পরতা শুরু করেছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও বিশ্বাস বিল্ডার্সের মালিক নজরুল ইসলাম দুলাল। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধে দলের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের মেয়ে ও দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য কল্পনা আক্তার ও প্রিয়াঙ্কা গ্রুপের মালিক সাইদুর রহমানের নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন তরুণ নেতা বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্তু কুমার কুণ্ডু। তিনি এলাকায় ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি আবদুল ওহাব ও কেন্দ্রীয় মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ।ঝিনাইদহ-২ আসন এ যাবৎকাল বিএনপির দখলে থাকলেও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক এমপি মসিউর রহমানকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সফিকুল ইসলাম অপু প্রথমবারের মতো পরাজিত করেন। তবে সফিকুল ইসলাম অপুু গত সংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নূরে আলম সিদ্দিকীর ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমিরের কাছে পরাজিত হন। তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমির সম্প্রতি আওয়ামী লীগে যোগদান করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারই মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এরই মধ্যে তিনি এলাকার সাধারণ মানুষকে নানা সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের এক প্লাটফর্মে রাখার চেষ্টাও করে যাচ্ছেন। তবে থেমে নেই সফিকুল ইসলাম অপু। নির্বাচনী এলাকায় তারও সৎ রাজনীতিক হিসেবে সুনাম রয়েছে। দলের প্রতীক পেতে তিনিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন হরিণাকুণ্ডু উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মজিদ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম লাবলু।
ঝিনাইদহ-৩ (মহেশপুর ও কোটচাঁদপুর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যুদ্ধের জন্য লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন নবী নেওয়াজ এমপি। দলীয় টিকিট পেতে তত্পরতা চালাচ্ছেন সাবেক এমপি শফিকুল আজম খান চঞ্চল, থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাজ্জাতুজ জুম্মা চৌধুরী, সাবেক এমপি মায়া তালুকদার, জেলা কৃষক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক সাজ্জাদুল ইসলাম সাজ্জাদ ও মিল্লাতুজ্জামান মিল্লাত।
অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন কয়েকজন। তারা হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক বিষয়ক সহ-সম্পাদক কণ্ঠশিল্পী মনির খান, তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, সহ-আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, কোটচাঁদপুর থানা বিএনপির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক এমপি মরহুম শহিদুল ইসলাম মাস্টারের ছেলে মেহেদি হাসান রনি ও মহেশপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুর রহমান মোমিন। সবাই নিজেদের মতো করে গণসংযোগ চালানোর পাশাপাশি কেন্দ্রে লবিং করছেন। তবে এ আসনে জোটগতভাবে নির্বাচন হলে কেন্দ্রীয় জামায়াতের শূরা সদস্য অধ্যাপক মতিয়ারকেও মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। ঝিনাইদহ-৪ (কালীগঞ্জ ও সদরের বাকি অংশ) আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী কালীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। এ ছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম খান, জেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি আক্কাস আলী, কালীগঞ্জ উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান মতির নামও শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান বেল্টু ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় এক নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এ ছাড়া থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হামিদুর রহমান হামিদ ও সাবেক পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমানও তত্পরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।