হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ১৫ কর্মকর্তা ও ৪৬ জন ঠিকাদারসহ মোট ৬১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বিকাল ৩টায় দুদকের সহকারী পরিচালক ফারুক আহমদ বাদী হয়ে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে সরকারি কর্মচারীদের দ্বারা সরকারি কাজ সম্পাদনকালে অসৎ উদ্দেশে ভবিষ্যৎ প্রকল্পে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করার সুযোগ সৃষ্টি, কৃষক ও জনসাধারণের আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগ আনা হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষার জন্য ৬৮ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে ৪৮ কোটি টাকা ঠিকাদার ও ২০ কোটি টাকা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে ব্যয় করে হাওরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় পাউবো।
দুদকের মামলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুনামগঞ্জের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দিন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম সরকার ও সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবদুল হাইসহ সংস্থাটির ১৫ জন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর ওই তিন কর্মকর্তাকে সমায়িক বরখাস্ত করেছিল পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
সুনামগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, মামলার বাকি আসামিরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার।কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ার পর দুদকের সহকারী পরিচালক সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন। প্রসঙ্গত, আগাম বন্যায় ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যেতে শুরু করে একে একে হাওরের ফসল। সরকারি হিসাবে হাওরে আবাদকৃত ফসলের ৯০ ভাগ তলিয়ে যায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন প্রায় চার লাখ কৃষক পরিবার। এর পর থেকে বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা ঠিকাদার ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেন কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
সুনামগঞ্জে ৬১ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রকৌশলীসহ দুজন কারাগারে : আমাদের আদালত প্রতিবেদক জানান, হাওরে বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির মামলায় সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরখাস্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আফছার উদ্দীন ও ঠিকাদার মো. বাচ্চু মিয়াকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর হাকিম লস্কার সোহেল রানা এ আদেশ দেন।
মামলা হওয়ার পর মতিঝিল এলাকা থেকে বরখাস্ত নির্বাহী প্রকৌশলী আফছার উদ্দীন ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইব্রাহিম ট্রেডার্স অ্যান্ড শামিম আহসানের স্বত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়াকে গ্রেফতার করে দুদক।