শুক্রবার, ২৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

কুরিয়ার সার্ভিসে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক

রুহুল আমিন রাসেল

কুরিয়ার সার্ভিসে অবৈধ অস্ত্র ও মাদক

সীমান্ত গলিয়ে আসা অবৈধ অস্ত্র আর মাদকদ্রব্য সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিসকে। পার্সেলে করে চোরাচালানের অবৈধ পণ্য কাভার্ড ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির ৫৮তম সভায় এমন আশঙ্কাজনক তথ্য উঠে এসেছে। সভায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা বলেছেন, কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ড ভ্যানগুলোতে তল্লাশিতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা কিছু করতে পারছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা কাভার্ড ভ্যানে তল্লাশির অনুমতি চান। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক বিষয়ে এসব তথ্য জানার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সীমান্ত এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, প্রতিবেশী মিয়ানমারের সীমান্ত পথ দিয়েই বাংলাদেশে বেশি অবৈধ অস্ত্র আসছে। আবার যেসব এলাকার সীমান্ত কম সুরক্ষিত, সেসব পথ দিয়েও ছোট আকারের অস্ত্র— পিস্তল, রিভলবার, মাদক ও অবৈধ পণ্য আসছে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জাতীয় চোরাচালান প্রতিরোধ কমিটির ৫৮তম সভায় সভাপতির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর প্রধানদের নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরকদ্রব্য উদ্ধার এবং চোরাচালানবিরোধী অভিযান সম্পর্কে ওই সভার কার্যবিবরণীতে আরও বলা হয়— স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষুদ্র অস্ত্র বিশেষ করে পিস্তল বা রিভলবার চোরাচালান প্রতিরোধে সতর্কতা অবলম্বনের ওপর গুরুত্ব দেন। সংশ্লিষ্ট এলাকায় ‘চোরাচালান প্রতিরোধ টাস্কফোর্স কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে ক্ষুদ্র অস্ত্র চোরাচালান বন্ধে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রধানদের নির্দেশনা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

ওই সভায় উপস্থিত পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার সীমান্ত এবং যেসব এলাকায় সীমান্ত কম সুরক্ষিত সেখান দিয়েই বেশি অস্ত্র আসছে। এ ছাড়া বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস এবং পরিবহন সংস্থার মাধ্যমেও অস্ত্র, মাদক ও অবৈধ দ্রব্যাদি দেশের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্ত এলাকার সম্ভাব্য সব স্থানে অত্যাধুনিক সার্ভিলেন্স ডিভাইস স্থাপন করে তা দ্রুত চালুর তাগিদ দেন। ওই সভায় এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ পুলিশ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি, র‌্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও সব বিভাগীয় কমিশনারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। চোরাচালানবিরোধী অভিযান সম্পর্কে ওই কার্যবিবরণীতে বলা হয়— সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া চোরাচালানবিরোধী অভিযানের প্রতিবেদনে উল্লিখিত আটক হওয়া মাদকদ্রব্যের পরিমাণে ব্যাপক গরমিল বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। যেসব ক্ষেত্রে প্রতিবেদনে তথ্যের গরমিল থাকে তার মধ্যে রয়েছে— অভিযান ও আটক ব্যক্তির সংখ্যা, উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, মামলার সংখ্যা, নিষ্পত্তি হওয়া মামলার মধ্যে সাজা ও খালাস প্রাপ্তি, অনিষ্পন্ন তদন্ত ও বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ইত্যাদি। বিজিবির অস্ত্র ও গোলাবারুদ আটকের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৩০ মে পর্যন্ত ১৯টি পিস্তল, একটি রিভলবার, বিভিন্ন প্রকারের ২৬টি গান, প্রায় ১২ কেজি গান পাউডার আটক করেছে বিজিবি।

সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সীমান্ত পথ দিয়েই অবৈধ অস্ত্রের চালান বাংলাদেশে আসার সন্ধান পাওয়া গেছে র‌্যাবের তথ্য-উপাত্তে। র‌্যাবের তথ্যমতে, র‌্যাবের অভিযানে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া থানার কৈয়ারবিল এলাকা থেকে ১৯টি অস্ত্র এবং ৬২১ রাউন্ড গুলিসহ মনোয়ারুল ইসলাম  চৌধুরী মুকুল নামের একজন অস্ত্র ব্যবসায়ীকে গত ২৯ জুন গ্রেফতার করা হয়। কক্সবাজার একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হওয়ায় এখানে অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাস, মাদক, চোরাচালান, অপহরণ এবং অন্যান্য বিভিন্ন অপরাধ প্রতিনিয়ত সংঘটিত হচ্ছে। মুকুল অস্ত্রের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তিনি সর্বদা অবৈধ অস্ত্র মজুদ রাখেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর