বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অজানা অধ্যায়

নেপথ্য ষড়যন্ত্রীদের মুখোশ উন্মোচনে গবেষণা হোক

—আবুল হাসান চৌধুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক

নেপথ্য ষড়যন্ত্রীদের মুখোশ উন্মোচনে গবেষণা হোক

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পেছনে যারা ছিল তাদের মুখোশ উন্মোচন করতে গবেষণা হওয়া উচিত। বিপথগামী কিছু সেনা কর্মকর্তা নাকি তার পেছনে থাকা অন্য আরও কেউ ওই ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, গবেষণায় তা বেরিয়ে আসবে। বঙ্গবন্ধুর খুনিকে আশ্রয় দেওয়া নিয়ে কানাডার ভূমিকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। একজন খুনিকে আশ্রয় দিয়ে কানাডা কেমনতর আইনের শাসন এবং মানবতা দেখাচ্ছে?’ আবুল হাসান চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনা সম্পর্কে বলতে গিয়ে এসব মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘যত দিন যাবে আমরা আরও উপলব্ধি করব বঙ্গবন্ধু শুধু স্বাধীনতাই এনে দেননি, উপহার দিয়েছিলেন একটি গণতান্ত্রিক সংবিধান। তিনি স্বাধীন দেশের মূর্তপ্রতীক। আজকের বিশ্ব আর সেদিনের বিশ্ব প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তখন দৃশ্যপট দুই বিরাট শক্তির ভিতরে বিভাজিত ছিল। বঙ্গবন্ধু একটি স্বাধীন সচেতন নীতি নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। সব শক্তি তার এই নীতি সমর্থন করেছে তা বলা যাবে না। তাই এ ব্যাপারে আরও গবেষণা হওয়া উচিত। কয়েকজন বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা এ ধরনের ঘৃণ্য কাজ করল। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে এর পেছনে কারা ছিল? আগে যেসব গবেষণা হয়েছিল সেগুলো নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছে। তাই এ সরকার অত্যন্ত সঠিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রেক্ষাপট তুলে ধরবে। আমার মনে হয় আরও যদি কেউ এই ঘৃণ্য কাজে সক্রিয়ভাবে জড়িত থাকে তাহলে আরও অনুসন্ধান প্রয়োজন।’ ওই সময়ে গণমাধ্যমের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘দেশ-বিদেশের স্বাধীন গণমাধ্যমগুলো এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করেছে। এটা বিশ্বের নৃশংস মানবতাবিরোধী অপরাধগুলোর অন্যতম। বিশ্বের বিরাট একটা অংশ বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল। পাকিস্তানের মদদ পাওয়া এবং তদানীন্তন খুনি সরকারের প্রেসনোট যারা ছেপেছে এ রকম কিছু গণমাধ্যম বিষয়টাকে অন্যভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এখনকার মতো যদি যোগাযোগব্যবস্থা থাকত তাহলে এই কাজের দুঃসাহস তাদের হতো না। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর অবদান উপলব্ধি হচ্ছে। তিনি শুধু একটা দেশের নন, বিশ্বনেতাদের মধ্যে অন্যতম।’ বিদেশে পলাতক বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সাবেক এই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘খুনিদের ফিরিয়ে আনতে কূটনৈতিক তৎপরতা চলা উচিত এবং চলছে। আমি যখন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ছিলাম তখন ওভাল অফিসে মিটিংয়ে ছিলাম। ওই বৈঠকে তখনকার পররাষ্ট্র সচিব শফি সামি উপস্থিত ছিলেন। খুনিদের প্রসঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বলেছিলেন, “আই ডোন্ট ওয়ান্ট দিস পিপল টু স্টে হিয়ার।” তিনি বলেছিলেন, “আমি প্রেসিডেন্ট না-ও থাকতে পারি। এই অফিস তো আছে।” তাই বুঝতে পারছি না এখনো এত দেরি কেন হচ্ছে।’ খুনি বজলুল হুদাকে প্রত্যর্পণ করায় থাইল্যান্ড সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আবুল হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার একটু তৃপ্তিবোধ আছে। আমরা বজলুল হুদাকে থাইল্যান্ড থেকে নিয়ে আসার পর তার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। তাকে নিয়ে আসার প্রক্রিয়ায় সচেষ্ট ছিলেন রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের ও সোহরাব হোসেন। এ দুজনকে অশেষ ধন্যবাদ জানাতে হয়। তদানীন্তন থাইল্যান্ড সরকার এবং উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুকুম্মাম পরিপাত ও তার আগে দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্তরাবিততাই আনন্দ বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। এই একটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক সব সময়ই ভালো। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে আনতে একটা সেল গঠন করা হয়েছিল। এর দায়িত্বে ছিলেন তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। আমিও সেই সেলের সদস্য ছিলাম। ফিরিয়ে আনা খুনিদের বিচার চলমান আইনে হয়েছে। কোনো স্পেশাল ট্রাইব্যুনালে হয়নি। কানাডায় বঙ্গবন্ধুর খুনিকে আশ্রয় দেওয়া এবং না ফিরিয়ে দেওয়া আমার কাছে একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা আইএসের বিরোধিতা করে, জাতিসংঘে শান্তির কথা বলে অথচ তাদের দেশে একজন খুনিকে ঠাঁই দিয়েছে। আমাদের দেশের আদালত যাকে অপরাধী খুনি চিহ্নিত করে রায় দিয়েছে তাকে তারা আশ্রয় দিল। এই-ই কি তাদের আইনের শাসন?’

সর্বশেষ খবর