বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সবার চোখ সমুদ্র অর্থনীতিতে

রুহুল আমিন রাসেল

সমুদ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগের নতুন দিগন্তে এখন বাংলাদেশ। ভূ-কেন্দ্রিক উন্নয়নের সঙ্গে সমুদ্রভিত্তিক এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন সৃষ্টি করতে পারে নবজাগরণের। বিশ্বের সম্পদশালী রাষ্ট্রগুলোও বাংলাদেশের ব্লু ওসান ইকোনমি বা নীল সমুদ্র অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। সবার চোখ সম্ভাবনাময় এ বিশাল খাতে।

তথ্যমতে, এখনই দেশের প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবনযাত্রা সমুদ্র অর্থনীতির বিভিন্ন কার্যক্রমের ওপর নির্ভরশীল। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সমুদ্রসীমায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ব্যাপক সুযোগ থাকলেও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ হয়নি। সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ, পরিবহন ও পর্যটন খাতে বিনিয়োগের বহুমুখী ক্ষেত্র প্রস্তুত। সেজন্য সরকারি বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সমুদ্র ও নদী বন্দরগুলোর মধ্যে যোগাযোগ ও সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। অ্যাকুয়া ট্যুরিজম প্রসারে সমন্বিত উদ্যোগ, ক্রুজশিপ সার্ভিস চালুসহ নানা কার্যক্রম হাতে নেওয়া যেতে পারে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে।

আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের (অ্যামচাম) সাবেক সভাপতি আফতাব উল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সমুদ্র অর্থনীতিতে এই সরকার সফল। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলা, স্বাস্থ্য ও জ্বালানি খাতসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। সমুদ্রে ও অপশোর যে জ্বালানি আছে, তা বাংলাদেশ তুলতে পারছে না। সমুদ্র অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ আগ্রহ কাজে লাগাতে হবে।’

আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা তথ্য তুলে ধরে দেশের প্রাচীন বাণিজ্য সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) জানিয়েছে, বিশ্বজুড়ে সমুদ্র-সম্পর্কিত বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার ঘটছে। ২০০৭ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। ২০২০ সালের মধ্যে তা বেড়ে এক লাখ কোটি ডলারে দাঁড়াবে। বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ সমুদ্রপথে সম্পন্ন হয়। বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ হয় সমুদ্রপথে।

প্রসঙ্গত, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ নিষ্পত্তির পর বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরে এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি রাষ্ট্রাধীন সমুদ্র (টেরিটোরিয়াল সি) পেয়েছে। ২০০ নটিক্যাল মাইল একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানের তলদেশে সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকারও পায় বাংলাদেশ। এরপর সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করতে ২০১৪ সালের ২০ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে ১৮টি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের তথ্যমতে, গভীর সমুদ্রের বিশাল অংশ বাংলাদেশের জলসীমায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এর পরিমাণ দেশের মোট স্থল অঞ্চলের প্রায় ৮১ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদীপথে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পণ্য পরিবহন বাড়াতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন জাহাজ পরিচালনা বাড়ানোর পাশাপাশি নদীবন্দরগুলোর আধুনিকায়নের ওপর সরকার গুরুত্ব্ব দিয়েছে। জাহাজ নির্মাণ ও জাহাজ ভাঙা শিল্পে সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রুজশিপ পরিচালনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে নতুন সমুদ্রসীমায়। তবে এ খাতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত। প্রায় ৭৫টির মতো ছোট-বড় দ্বীপ রয়েছে। এগুলোতে পর্যটন সম্প্রসারণের পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন।

বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ আওয়ার সি’র এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বাংলাদেশি জাহাজ যুক্ত হওয়ায় এ খাতে নতুন ধরনের কর্মসংস্থান বাড়ছে। বর্তমানে ২৫০ জাতের মিঠা পানির মাছের বিপরীতে সাগরে রয়েছে অন্তত ৪৭৫ প্রজাতির মাছ। বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছর ৮ মিলিয়ন টন মাছ ধরা পড়ে। এর মধ্যে শূন্য দশমিক ৭০ মিলিয়ন টন বাংলাদেশের মত্স্যজীবীরা আহরণ করে। উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় ৩০ লাখ মানুষের জীবিকা এর সঙ্গে জড়িত। নানা প্রজাতির মাছ ছাড়াও সমুদ্রসীমায় বিভিন্ন ধরনের প্রবাল, গুল্মজাতীয় প্রাণী, কাঁকড়া, শামুক-ঝিনুক পাওয়া যায়।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর