শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
রাঙামাটিতে পাহাড়ধস

ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষোভ আর শঙ্কা নিয়ে ছাড়ছে আশ্রয় কেন্দ্র

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

রাঙামাটিতে পাহাড়ধসের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি ছিল অনেক। বলা হয়েছিল, পুনর্বাসন করা হবে। এতে নিরাপদ স্থানে মাথা গোঁজার ঠাঁই হওয়ার আশা ছিল। তাই নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখেছিল পাহাড় ভাঙা নিঃস্ব মানুষগুলো। কিন্তু বাস্তবায়ন হয়নি প্রতিশ্রুতির একটিও। এ অবস্থায় ক্ষোভ আর অজানা শঙ্কা নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়ছেন ক্ষতিগ্রস্তরা।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাহাড়ধসে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের ৬ হাজার টাকা, ২ বান্ডিল টিন ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের ৩০ কেজি চাল ও এক হাজার টাকার ত্রাণসামগ্রী দিয়ে ৭ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ী আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়ছেন আশ্রয়হীনরা। এতে করে আবারও আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছেন মানুষগুলো। মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে বেড়াচ্ছেন অনেকেই। স্বামী, সন্তান, পরিবার ও স্বজনহারা মানুষগুলো এখন অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। এ নিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে স্থানীয় সাধারণ মানুষের মধ্যেও। এ ব্যাপারে স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর রবিমোহন চাকমা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের নামে যে ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হয়েছে- তা খুবই সামান্য। এসব ত্রাণ দিয়ে তারা আদৌ গৃহনির্মাণ করতে পারবে কিনা- তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পাহাড়ধসের ঘটনার পর সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন প্রতিনিধি দল রাঙামাটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ও আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, নতুন কোনো নিরাপদ স্থানে তাদের পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু পাহাড়ধসের দীর্ঘ ৩ মাসেও করা হয়নি এসব মানুষের পুনর্বাসন। দেওয়া হয়নি নতুন কোনো জায়গার ঠিকানা। অনিশ্চয়তার মধ্যে প্রতিশ্রুতির আশা নিয়ে দিন পার করেছেন এসব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। কিন্তু এখন সরকারি বরাদ্দ শেষ হওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে আশ্রয় কেন্দ্র। এ ব্যাপারে রাঙামাটি মাড়ি স্টেডিয়াম (আশ্রয় কেন্দ্র) সকিনা বেগম অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়ধসের ঘটনার পর সরকারের পক্ষ অনেক বড় বড় কথা বলেছিল। আমাদের পুনর্বাসন করা হবে, জায়গা-জমি দেওয়া হবে, ঘর বেঁধে দেওয়া হবে- অনেক স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু এখন আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে যেতে বলছে। পাহাড়ে চাপা পড়ে আমার বাম হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ব্যান্ডেজ খোলা হয়নি। ভাঙা হাত নিয়ে এখন আমি বুড়ো বয়সে কোথায় যাব? আশ্রিত আর একজন জিন্নাত আলী বলেন, শহরের শিমুলতলীতে আমার ঘর ছিল। পাহাড়ধসে বিধ্বস্ত হয়েছে ঘর। হারিয়েছি ভিটাবাড়ি। তিন মাস ধরে আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছি। কিন্তু তবুও তো একটা মাথা  গোঁজার ঠাঁই ছিল। জেলা প্রশাসন নিষেধ কিরেছে আগের জায়গায় নতুন বাড়িঘর তৈরি করতে। তারা আমাদের অন্য জায়গায় পুনর্বাসন করবে বলেছিল। কিন্তু এত দিন পর বলছে, আমাদের আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে দিতে। এখন আমরা কোথায় যাব? অভিযোগের বিষয়ে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি তাদের যথাযথ পুনর্বাসন করতে। কিন্তু সে রকম নিরাপদ খাসজমি পাওয়া যায়নি। যেসব জমি আছে- সব পাহাড়ে। আমরা তাদের পাহাড়ে আবারও বিপদের মুখে ঠেলে দিতে পারি না। আর যেসব সমতল জমি ছিল তাও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। এ অবস্থায় সরকারের বরাদ্দ শেষ হয়ে গেছে। তাই তাদের আর আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে সহায়তা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে কোনো নিরাপদ জমি পাওয়া গেলে তাদের সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর