শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভোট ও জোটে নতুন হিসাব ইসলামী দলে

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ভোট ও জোটে নতুন হিসাব ইসলামী দলে

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসলামী দলগুলো জোট ও ভোটকে কেন্দ্র করে ভিতরে ভিতরে নতুন হিসাবে ব্যস্ত সময় পার করছে। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ে নিজেদের শক্ত অবস্থানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। ইসলামী দলগুলোর বাইরে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় অন্তত ৩০ জন নেতা নিবন্ধিত দলের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেবেন। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থাকা ইসলামী দলগুলোও জোটপ্রধানদের সঙ্গে নতুন করে হিসাব করবে। পাশাপাশি জোটের বাইরে থাকা ইসলামী দলগুলোও নির্বাচনের আগে একটি আলাদা প্লাটফরম তৈরির চেষ্টা করবে।

সামগ্রিক প্রসঙ্গে ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান আবদুল লতিফ নেজামী বলেন, ‘নির্বাচন এলেই বড় দলগুলো ভোটের প্রত্যাশায় ছক কষে। কারণ ইসলামী দলগুলোর আলেম-ওলামাদের নেতৃত্বে সারা দেশেই একটা ভোটব্যাংক আছে। ভোটের রাজনীতিতে ইসলামী দলগুলো একটা বড় ফ্যাক্টর।’ সেই ডাকে সাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলামী আদর্শ প্রতিষ্ঠার চেয়ে সংসদে যাওয়ার গুরুত্ব যে বেশি, তা স্পষ্ট প্রকাশ পাচ্ছে এই দলগুলোর নেতাদের কথায়।

বিভিন্ন দলের ব্যানারে নির্বাচনে যাবেন হেফাজত নেতারা : হেফাজতে ইসলাম রাজনীতিতে আসতে পারে এবং আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারে এমন গুঞ্জন সর্বত্র। আছে আলোচনা-সমালোচনাও। হেফাজতে ইসলাম কি রাজনীতিতে আসছে? আগামী নির্বাচনে কি অংশ নেবে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠনটি? জানা যায়, হেফাজতে ইসলামকে অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করা হলেও এর সঙ্গে জড়িত কেন্দ্রীয় নেতারা বিভিন্ন দলের শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছেন। তারা আগামী নির্বাচনে নিজ নিজ দল থেকে অংশ নিলেও হেফাজত নেতা হিসেবে ইমেজটা ধরে রাখবেন। হেফাজতে ইসলাম থেকে অন্তত ৩০ জনের একটি তালিকা করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ব্যানার থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া হবে।

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম অরাজনৈতিক সংগঠন। রাজনীতি নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। ভবিষ্যতেও হেফাজতের রাজনীতিতে আসার কোনো সম্ভাবনা নেই। নির্বাচনে অংশ নিতে হলে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়। আমাদের কোনো নিবন্ধন নেই। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথাও অবান্তর। তবে ইসলামী ঐক্যজোট সারা দেশে এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে হবে আলাদা হিসাব : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের একমাত্র ইসলামী দল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। সংগঠনের মহাসচিব এম এ আউয়াল বলেন, ‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে জোটভুক্ত হওয়ার জন্য অনেক ইসলামী দল তরীকত ফেডারেশনের নেতৃত্বে একটি মোর্চা গঠনের প্রস্তাব দিচ্ছে। জোটের প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতির অপেক্ষায় আছি। নেত্রী অনুমতি দিলে তরীকত ফেডারেশনের নেতৃত্বাধীন মোর্চা হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী সংগঠন।’

এদিকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে রয়েছে জামায়াতে ইসলামী, খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। সম্প্রতি ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ত্যাগ করেছে। নতুন করে ভোটের হিসাব করছে সংগঠনটি। নিবন্ধন জটিলতার কারণে জামায়াত আগামী নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় নির্বাচনের মতো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলটির নেতারা সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন। জামায়াত এখনো ২০-দলীয় জোটে রয়েছে। তবে জোটে দলটির অবস্থান এখন স্পষ্ট নয়। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম আগামী নির্বাচন সামনে ইসলামী ঐক্যজোটের পথেই হাঁটতে পারে। দলটির যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরী হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে ৪০ থেকে ৫০ আসনে আমাদের ভালো প্রার্থী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন করলে প্রতিটি আসনেই আমাদের প্রার্থী বিজয়ী হবেন। আমরা আশাবাদী অতীতের মতো আমাদের আসন দেওয়া হবে না। সন্তোষজনক জোটবদ্ধ সংখ্যা আমরা পাব। আর জোটবদ্ধ আসনে রেখে সন্তুষ্ট না হলে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ এ ছাড়া বিএনপি জোটের অন্য ইসলামী দলগুলো হলো খেলাফত মজলিশ, ইসলামিক পার্টি ও মুসলিম লীগ।

জোটের বাইরের দলগুলোর মোর্চা : জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে কদর বাড়ছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা নিবন্ধিত চারটি ইসলামী দল ও জোটের। এগুলো হলো চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন, মুফতি আমিনী প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ঐক্যজোট, হাফেজ্জী হুজুর প্রতিষ্ঠিত খেলাফত আন্দোলন ও শায়খুল হাদিস আজিজুল হক প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ইসলামী আন্দোলন, ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত আন্দোলন ও খেলাফত মজলিসকে কাছে টানতে যোগাযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে ভোটের মাঠে নিজেদের গুরুত্ব বাড়াতে পৃথক একটি নির্বাচনী জোট গঠনেরও চেষ্টা চালাচ্ছে এসব দল। এমনকি অন্য জোটের শরিক ও বাইরে থাকা ইসলামী দলগুলোকেও সম্ভাব্য জোটে ভেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে। দলগুলোর নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জোটের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় যোগাযোগ করা হচ্ছে। এসব জোটে গেলে সম্মানজনকসংখ্যক আসন ছেড়ে দেওয়ারও আশ্বাস মিলছে। ইসলামী আন্দোলনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, ‘আমরা ইসলামকে রাষ্ট্রক্ষমতায় প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এতে যারা রাজি হবে তাদের সঙ্গে জোট হতে পারে। পৃথক একটি ইসলামী জোট করার চিন্তা আমাদেরও আছে।’ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় অফিস ও বায়তুলমাল সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল বলেন, ‘এরশাদের জোটে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও আমরা তাতে যাইনি। মহাজোটের পক্ষ থেকেও বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে বড় দুই জোটের বাইরে থাকা নিবন্ধিত ইসলামী দল নিয়ে একটি জোট গঠনের ব্যাপারে আলোচনা চলছে।’ এই জোটগত নির্বাচন না হলে এককভাবে তারা শতাধিক আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জোটেও কয়েকটি ইসলামী দল ভিড়তে পারে বলে আলোচনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর