মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

সিলেট বিএনপিতে শূন্যতা হারিছ-ইলিয়াসের

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সিলেট বিএনপিতে শূন্যতা  হারিছ-ইলিয়াসের

হারিছ চৌধুরী - ইলিয়াস আলী

হারিছ চৌধুরী ও এম ইলিয়াস আলী। প্রথমজন উধাও, পরেরজন ‘নিখোঁজ’ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে। সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে তাদের ছিল ব্যাপক প্রভাব। তাদের ইশারায় চলত সিলেট বিএনপি। ইলিয়াস সিলেটের রাজপথে থেকে দলকে দিয়েছেন  নেতৃত্ব আর হারিছ কলকাঠি নাড়তেন ঢাকায় বসে। বিএনপির কেন্দ্রীয় পর্যায়েও প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তারা। এ দুই নেতার ‘উধাও’ আর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে তাদের শূন্যতা পূরণ হয়নি। এমনকি কেন্দ্রীয় বিএনপিতে যেভাবে মূল্যায়িত হতেন তারা, সে পর্যায়েও সিলেট বিএনপির কোনো নেতা যেতে পারেননি। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বাসিন্দা হারিছ চৌধুরী। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব। ওই সময়কার আলোচিত হাওয়া ভবনের মদদপুষ্ট এই নেতা হয়ে উঠেছিলেন দুর্দণ্ড প্রতাপশালী। তার দাপটে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতাই তখন খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানের কাছে ঘেঁষতে পারতেন না— এমন অভিযোগ ছিল অনেকেরই। হারিছ চৌধুরীর ব্যাপক প্রভাব ছিল সিলেট বিএনপিতেও। সিলেট বিএনপির একটি বলয় নিয়ন্ত্রণ করতেন তিনি। পছন্দের লোকজনকে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাইয়ে দিতে কাজ করতেন। তবে চারদলীয় জোট সরকারের আমল শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশ ছেড়ে উধাও হয়ে যান এই বিএনপি নেতা। ২০০৭ সালের ২৯ জানুয়ারি সিলেট সীমান্ত দিয়ে ভারতের করিমগঞ্জে পালিয়ে যান হারিছ চৌধুরী। এরপর থেকে তার প্রকাশ্য কোনো আনাগোনা নেই। মাথার ওপর দুর্নীতি মামলার সাজা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা এবং কিবরিয়া হত্যা মামলা ঝুলে থাকায় দেশমুখীও হননি তিনি। বর্তমানে ভারত, ইরান ও যুক্তরাজ্যে ফেরারি হয়ে ঘুরছেন হারিছ চৌধুরী— এমন তথ্য পাওয়া গেছে তার ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে ‘নিখোঁজ’ হন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইলিয়াস আলী। মধ্যরাতে গাড়িচালক আনসার আলীসহ ইলিয়াসকে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা ইলিয়াস আলী ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব ছিল তার কাঁধে। ২০০১ সালের নির্বাচনে সিলেট-২ আসনের সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। টিপাইমুখ বাঁধবিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সোচ্চার হয়ে জাতীয় রাজনীতিতে ক্রমেই নিজের শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিচ্ছিলেন ইলিয়াস আলী। সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর ইলিয়াসই হয়ে উঠেছিলেন সিলেট বিএনপির একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিপতি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপির রাজনীতির জন্য হারিছ চৌধুরী ও ইলিয়াস আলী যে ‘সম্পদে’ পরিণত হয়েছিলেন, সিলেট থেকে সে পর্যায়ে আর কোনো নেতা এখনো যেতে পারেননি। স্থানীয় কিংবা বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে এ দুই নেতার যে প্রভাব বলয় ছিল, তাও এখানকার আর কোনো নেতা গড়তে পারেননি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে নিজেদের প্রভাব দিয়ে সিলেটের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই আদায় করেছেন হারিছ চৌধুরী ও ইলিয়াস আলী। হারিছ চৌধুরী ও ইলিয়াস আলীর শূন্যতা পূরণে নতুন নেতৃত্ব গড়ে তুলতে বিএনপি ব্যর্থ হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম বলেন, হারিছ চৌধুরী ও ইলিয়াস আলী সিলেটের কৃতীসন্তান। বিএনপির কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ছিল। তাদের অনুপস্থিতিতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে তা এখনো পূরণ হয়নি। এ ছাড়া সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুতেও সিলেট বিএনপি যেভাবে অভিভাবকশূন্য হয়েছিল তাও পূরণ হয়নি।

সর্বশেষ খবর