শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

অপেক্ষা উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের

নিজামুল হক বিপুল, বন জার্মানি থেকে

এক সপ্তাহ পর গতকাল বন-এর আকাশে সূর্যের দেখা মিলেছে। সকাল থেকেই ঝলমলে রোদ। তবে তাপমাত্রা যথারীতি ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সঙ্গে বইছে ঠাণ্ডা বাতাস। এরই মধ্যে সাপ্তাহিক ছুটির এক দিন বিরতি দিয়ে গতকাল সকাল থেকে আবারও শুরু হয়েছে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের কার্যক্রম।  দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরুতেই বন-এ উপস্থিত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ। সবাই এখন তাকিয়ে আছেন তাদের দিকে। আশা করছেন, উপস্থিত উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ আলোচনার বিভিন্ন কারিগরি দিক উতরিয়ে সপ্তাহের শেষ নাগাদ মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সক্ষম হবেন।  দ্বিতীয় সপ্তাহের আলোচনা শুরুর প্রাক্কালে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ও পরিবেশবাদী সংগঠনসমূহের মুখপাত্র ‘ইকো’ মন্ত্রীদের সামনে ছয়টি অগ্রাধিকার উপস্থাপন করেছে।

প্যারিস চুক্তিতে এই শতকের মধ্যে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে এবং এক দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা সীমিত রাখার যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তার আলোকে গ্রীন হাউস গ্যাস নির্গমনের উচ্চতর লক্ষ্য নির্ধারণের জন্য যে সংলাপের কথা বলা হয়েছে তাতে গুরুত্বারোপ করতে হবে। নাগরিক সংগঠনসমূহ এবং ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো বর্তমান প্রেসিডেন্সি ফিজি ও ২০১৮ এর প্রেসিডেন্সি পোল্যান্ডের কাছে জোর আহ্বান জানিয়েছে, ২০২০ এর পূর্বের এবং ২০২০ এর পরের নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধির জন্য একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ সংলাপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে।  এবারের সম্মেলনের অন্যতম প্রধান বিষয় ২০১৮ এর মধ্যে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের বিধিমালা তৈরি। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ নাগাদ এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। বেসরকারি উন্নয়ন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো বন-এ ই খসড়া বিধিমালা প্রণয়নের ও প্রকাশের জোর দাবি জানিয়েছে। যাতে করে পোল্যান্ড সম্মেলনে এই খসড়া অনুমোদন হতে পারে এবং ২০২০ সাল নাগাদ প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন শুরু হতে পারে। কিয়োটো প্রটোকোলের দ্বিতীয় অঙ্গীকারকালের  (সেকেন্ড কমিটমেন্ট পিরিয়ড) অঙ্গীকারকৃত নির্গমন হ্রাস লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে এই অঙ্গীকার বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের আলোচকদের প্রতি জোর দাবি জানানো হয়েছে। একসঙ্গে এই পর্যায়ের অঙ্গীকার বাস্তবায়নের পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতে উন্নত দেশের সহায়তা বৃদ্ধিরও জোর আহ্বান জানানো হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নির্গমন হ্রাস ও অভিযোজনের জন্য প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠনের যে সিদ্ধান্ত এরই মধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে সে তহবিলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অর্থায়ন ঘাটতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। উন্নয়ন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো উন্নত দেশগুলোকে তাদের ওয়াদা বরখেলাপ না করার অনুরোধ জানিয়েছে। একই সঙ্গে তাদেরকে অনুরোধ জানানো হয়েছে এই অর্থায়নের একটি বিস্তৃত পদ্ধতি গ্রহণ করতে। অর্থায়ন বিষয়ের এই আলোচনায় একই সঙ্গে তারা উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ছে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে তাদের ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে সৃজনশীল অর্থায়নের জন্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগাতে। অভিযোজন তহবিল কিয়োটো প্রটোকলের বিষয় হলেও প্যারিস চুক্তিতে এই তহবিলকে কার্যকরভাবে টিকিয়ে রাখার অঙ্গীকার করা হয়েছে। কিন্তু বন-এর আলোচনায় এখনো এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি সাধিত হয়নি। প্যারিস চুক্তির পর দুই বছর পার হয়ে গেলেও এ ক্ষেত্রে যথাযথ অগ্রগতি না হওয়ায় উষ্মা প্রকাশ করেছে উন্নয়ন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো। তারা বলেছে, আইন ও কারিগরি সমস্যার অজুহাতে প্যারিসে গৃহীত রাজনৈতিক অঙ্গীকার বাস্তবায়নে টালবাহানা ও ধীরগতি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তারা অবিলম্বে অভিযোজন তহবিলকে প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের অন্যতম একটি মাধ্যম হিসেবে ব্যবহারের জোর আহ্বান জানিয়েছে।  ৫ বছর আগে জলবায়ু পরিবর্তনের ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ বিষয়ে ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম প্রতিষ্ঠা করা হলেও এর বাস্তবায়নেও ধীরগতি এবং টালবাহনা চলছে।

এমনকি ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজমের নির্বাহী কমিটিকেও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে না। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো এবং বেসরকারি ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো অবিলম্বে ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম বাস্তবায়নের জন্য একটি কার্যকর ও অংশগ্রহণমূলক সংলাপ পরিচালনার জোর আহ্বান জানিয়েছে।

গ্রামীণ জীবনযাত্রার স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযানের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক মুক্তা বলেন, লস অ্যান্ড ড্যামেজ বিষয়ক আলোচনায় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, তথাকথিত ইন্স্যুরেন্স মেকানিজমই লস অ্যান্ড ড্যামেজ মোকাবিলার একমাত্র পন্থা নয়। বাংলাদেশের মতো স্বল্প উন্নত দেশগুলো তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে যে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে তা ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের বিপন্নতা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইন্স্যুরেন্স মেকানিজমের নামে রি-ইন্স্যুরেন্সের মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে সম্পদ পাচারের প্রয়াস বন্ধ করতে হবে এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

এদিকে গতকাল একটি সাইট ইভেন্টে অংশ নিয়ে ক্যালিফোর্নিয়ার সাবেক গভর্নর এবং রিপাবলিক দলের নেতা শোয়ারগেস্ট বলেছেন, আমরা রিপাবলিক কিংবা ডেমোক্রেট বুঝি না। আমরা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে যে ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা সবাই মিলে মোকাবিলা করতে চাই।

অপরদিকে ক্লাইমেট অ্যাকশন নেটওয়ার্ক এর সাউথ এশিয়ার চেয়ারম্যান ড. এ আতিক রহমান বলেছেন, এবারের সম্মেলনে এখন পর্যন্ত ওভারঅল প্রোগেস স্লো। তবে আশা করছি সম্মেলনের শেষ দিকে এসে অনেক অগ্রগতি হবে। অনেক বিষয় আছে, যেগুলোতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দরকার। আশা করি বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক শুরু হবে তাতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসবে।

সর্বশেষ খবর