শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফেসবুক আইডির আসল ব্যক্তি কে

রংপুরে হামলায় আটক আরও ২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

যে ফেসবুকে দেওয়া ‘ধর্ম অবমাননার’ স্ট্যাটাস নিয়ে রংপুরে লঙ্কাকাণ্ড, সেই ফেসবুক আইডিটি আসলে টিটু রায়ের, নাকি অন্য কারও সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। তবে এ ঘটনায় তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান রংপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট  আবু রাফা মো. আরিফ জানান, ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে এটা তো ঠিক। ফেসবুকের প্রকৃত আইডিটি কার সেটি নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুলিশ সুপারের কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন বিটিসিএলের কাছে চিঠি দিয়েছে। বিটিসিএলের কাছ থেকেই তথ্য পাওয়া গেলে জানা যাবে, যে নম্বর দিয়ে ফেসবুক আইডিটি খোলা হয়েছিল সেই ব্যক্তি কে। তাকে শনাক্ত করতে পারলেই ধর্ম অবমাননার স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসবে।

পুলিশ জানায়, ‘ধর্ম অবমাননার’ স্ট্যাটাস প্রথমে দেন রাকেশ মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি। ১৬ অক্টোবর বাংলাদেশ টিনএজারস নামে একটি পেজে স্ট্যাটাসটি দেওয়া হয়। ১৮ অক্টোবর এর প্রতিবাদ জানিয়ে সেই পোস্টের একটি স্ক্রিনশট ফেসবুকে ছাড়েন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা জেলা শাখার সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আসাদুল্লাহ হামিদী। এর এক দিন পর ১৯ অক্টোবর মাওলানা হামিদীর স্ট্যাটাসটি শেয়ার হয় মোহাম্মদ টিটু নামের ফেসবুক আইডি থেকে। শুধু মোহাম্মদ টিটুই নন, স্ট্যাটাসটি একশর বেশি শেয়ার হতে দেখা যায়। তবে মোহাম্মদ টিটুর ফেসবুক প্রোফাইলে বিভিন্ন সময়ে শেয়ার করা হয় রংপুর সদর উপজেলার খলেয়া ইউনিয়নের ঠাকুরপাড়া গ্রামের টিটু রায়ের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক একাধিক ছবি। যদিও টিটু রায় ১০ বছর ধরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় থেকে কবিরাজি পেশায় জড়িত। টিটু রায়ের মা জীতেন বালা বলেন, ‘টিটু লেখাপড়া জানে না। এক দিন স্কুলে গেছিল টিটু। তার পর থাকি আর স্কুলে যায় নাই। কৃষি কাম করত। ১০ বছর আগে বিয়া করি নারায়ণগঞ্জ চলি যায়। স্যাটে কবিরাজি করে। মাঝে মাঝে বাড়িত আসি দুই-এক দিন থাকি চলি যায়।’ পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ‘আইডিটি টিটু রায়ের কি না, নাকি সেটি ফেক, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত করে বলা যাবে না। সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। তদন্ত কমিটিও কাজ করছে।’ আরও গ্রেফতার ২৪ : ঠাকুরপাড়ায় হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আরও ২৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে এ ঘটনায় ১২৪ জনকে আটক করা হলো। এদের বেশির ভাগই জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় পর্যায়ের কর্মী। আটকদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

নতুন ঘরে ক্ষতিগ্রস্তরা : আতঙ্ক আর শঙ্কা নিয়ে প্রশাসনের সহায়তায় গড়া নতুন বাড়িতে উঠেছেন হামলার শিকার ঠাকুরপাড়ার বাসিন্দারা। ক্ষতিগ্রস্ত দীনেশ রায় বলেন, ‘পুরানা ঘরোত যে সুখ আছিল, নয়া ঘর পাইলেও তাতে সেই সুখ ফিরি আসপ্যার ন্যায়।’ বৃদ্ধা বিধবা কৌশল্যা রানী বলেন, ‘৬০ বছরের সংসার। নয়া ঘর পায়া মাথা গোঁজার ঠাঁই হইলো। ভয় তো যায় নাই। পরিদর্শনে জাপার প্রতিনিধি দল : জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সকালে ঠাকুরপাড়া পরিদর্শন করে। এ সময় রুহুল আমিন হাওলাদার হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে সাংবাদিকদের বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে নিরীহ হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এটি ন্যক্কারজনক ও ঘৃণিত কাজ। হামলাকারীরা যে-ই হোক বিচারবিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে তাদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তবে এ ঘটনায় নিরীহ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পরে তিনি প্রতিটি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেন। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শুনীল শুভ রায় ও যুগ্ম-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম মিঠুসহ স্থানীয় নেতারা তার সঙ্গে ছিলেন। ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনারের পরিদর্শন : ভারতীয় ডেপুটি হাইকমিশনার অভিজিৎ চ্যাটার্জি গতকাল সকালে ঠাকুরপাড়া পরিদর্শন করেন। তিনি হামলার শিকার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি তিনি। প্রতিবাদ সমাবেশ : ঠাকুরপাড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদে এবং জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রংপুরে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন সংগঠন। সংগঠনগুলো হলো সুজন জেলা ও মহানগর কমিটি, বাসদ, সিপিবি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।

সর্বশেষ খবর