শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

বিচিমুক্ত পেয়ারা উদ্ভাবন

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

বিচিমুক্ত পেয়ারা উদ্ভাবন

এবার বিচিমুক্ত পেয়ারার জাত উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একদল গবেষক।

আর এ নতুন উদ্ভাবিত জাতের নামকরণ করা হয়েছে ‘বারি পেয়ারা-৪’। ইতিমধ্যে এই নতুন জাতের পেয়ারার অনুমোদনও পাওয়া গেছে বলে জানায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাধারণত পেয়ারায় বিচি থাকে বলে সকলেই জানি। আর এই বিচিযুক্ত পেয়ারা খেতে একটু কচকচে লাগে বা শক্ত থাকে। আর এ জন্য অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। অন্যান্য ফল যেমন কলা, আঙ্গুর বিচিমুক্ত হওয়ায় দেশ-বিদেশে অনেকেরই পছন্দ। আর এ চিন্তা থেকেই আমরা বিচিমুক্ত পেয়ারার জাত উদ্ভাবন করতে সিদ্ধান্ত নেই। ২০০৫ সাল থেকেই আমাদের এই গবেষণা শুরু হয়। তবে শেষের ১০ বছর আমাদের গবেষণা দল আপ্রাণ চেষ্টা চালানোয় আমরা সফল হতে পেরেছি। গাজীপুর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মদন গোপাল সাহা বলেন, ‘বারি পেয়ারা-৪’ সম্পূর্ণ বিচিমুক্ত হওয়ায় এটি এরই মধ্যে সারা ফেলেছে। নানাভাবে এই পেয়ারার প্রচার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে সারা বছরই কমবেশি পেয়ারা চাষ করা হয়ে থাকে। পেয়ারা হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন ফল। দেশের সব জায়গাতেই পেয়ারা জন্মে থাকে। নতুন জাতের ‘বারি পেয়ারা-৪’ এর গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে কোনো বিচি থাকবে না। পুরোটাই খাওয়ার যোগ্য। আর দেখতে একটু লাম্বাটে হবে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা জানান, ‘বারি পেয়ারা-৪’ অমৌসুমি জাত, ফল সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর মাসে সংগ্রহ উপযোগী হয়। গাছ প্রতি ফলের সংখ্যা বারি পেয়ারা-২ এর চেয়ে অধিক। প্রতিটি ফলের গড় ওজন ২৮৪ গ্রাম। ফলের আকার ১০ দশমিক ২ থেকে ৭ দশমিক ২৫ সেন্টিমিটার। ফল অত্যন্ত সুস্বাদু ও কচকচে। ফলের সংরক্ষণকাল দীর্ঘ ৯ দিন।

সেপ্টেম্বর মাসে যখন বাংলাদেশে অন্যান্য ফল খুব কম পাওয়া যায় তখন  ফল আহরণ শুরু হয়। জাতটি পাহাড়ি অঞ্চলসহ ব্যাপক বিস্তৃত আবহাওয়ায় চাষ উপযোগী। পেয়ারা গুত্ঃধপবধব পরিবারভুক্ত উদ্ভিদসমূহের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদ। যার প্রচলিত ইংরেজি নাম েঁধাধ। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলী দেশসমূহের আপেল নামে পরিচিত। পেয়ারা উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর ফল। প্রায় সব রকমের মাটিতে পেয়ারা চাষ করা যায়। তমব জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দো-আঁশ মাটি থেকে ভারি এটেল মাটি যেখানে পানি নিষ্কাশনের বিশেষ সুবিধা আছে সেখানে পেয়ারা ভালো জন্মে। ৪ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ২ মাত্রার অম্লক্ষারত্বের মাটিতে এটি সহজে জন্মে। পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে এটি অন্যান্য জাতের পেয়ারার মতো হলেও এর প্রধান বিশেষত্ব হচ্ছে এটি একটি সম্পূর্ণ বিচিবিহীন জাত। ফলের বাজার মূল্যও অধিক যা কৃষকের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। অন্যান্য পেয়ারার সংগ্রহকাল জুলাই আগস্ট এবং প্রস্তাবিত জাতটির সংগ্রহকাল সেপ্টেম্বর-অক্টোবর। উচ্চ ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ ফল সবার কাছে অত্যন্ত প্রিয়। পেয়ারার উন্নত ও উচ্চ ফলনশীল আকারে তুলনামূলক বড়, রোগ ও পোকামাকড় সহিষ্ণু এবং অমৌসুমে ফল ধরে। এটি উচ্চ ফলনশীল এবং পরিষ্কারভাবে পেয়ারার একটি অমৌসুমি  তথা নাবি জাত। প্রস্তাবিত জাতটিতে জুন মাসে ফুল আসে এবং সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে ফল সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। ফলের গাত্র মসৃণ, পরিপক্ব অবস্থায় হলদে সবুজ, শাঁস সাদা এবং খেতে খুবই সুস্বাদু। বাজারে যখন অন্যান্য জাতের পেয়ারা পাওয়া যায় না তখন এটি বাজারে আসে। প্রস্তাবিত জাতটিতে পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের আক্রমণ তুলনামূলকভাবে কম।

সর্বশেষ খবর