শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

হরিণ প্রজনন চর কুকরিমুকরিতে

মোস্তফা কাজল

হরিণ প্রজনন চর কুকরিমুকরিতে

চর কুকরিমুকরিতে হচ্ছে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র। বন বিভাগের উদ্যোগে ১৫০ একর বনভূমিতে হচ্ছে এ প্রজনন কেন্দ্র। এ অঞ্চলটি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় অবস্থিত। চর কুকরিমুকরির অবস্থান বঙ্গোপসাগরের মোহনায়। এখান থেকে সাগরের দূরত্ব ১২ কিলোমিটার। এই চর কুকরিমুকরিতেই আগামী ১৬ জানুয়ারি হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের যাত্রা হবে। এ ছাড়া এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার জন্য নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। বন বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, এখানকার বনে দেড় থেকে দুই হাজার চিত্রল হরিণ রয়েছে। কিন্তু বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি বছর বর্ষা ও বন্যার কারণে এ অঞ্চলে প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয় এই বনের হরিণগুলোকে। অন্যদিকে চরটিকে পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নেওয়া হলেও উল্লেখযোগ্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে। হরিণের বংশবৃদ্ধির জন্যই এই প্রজনন কেন্দ্র— বলছে বন বিভাগ। বন বিভাগ জানায়, ভোলার চরফ্যাশন পৌরসভা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে তেঁতুলিয়া নদীতে জেগে ওঠে চর কুকরিমুকরি বনভূমি। বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে ম্যানগ্রোভ ও পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয় তিন বছর ধরে। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনার অভাবে প্রায় ১৫০ একরের বনভূমিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হযনি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল জ্যাকবের প্রচেষ্টায় এই বনে চিত্রল হরিণ অবমুক্ত করা হয়। এ ছাড়া পর্যটকদের জন্য চরটি দৃষ্টিনন্দন করাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এ বনের উন্নয়ন ও হরিণ বসবাসের জন্য পদক্ষেপ হিসেবে হরিণ প্রজনন কেন্দ্র গড়ে তোলার কাজে হাত দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য জ্যাকব। এ এলাকার শিক্ষক মিন্টু মিয়া জানান, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তত্ত্বাবধানের অভাবে এত দিন এ এলাকার হরিণগুলো নানা কারণে বিপর্যয়ের মুখে পড়ত। প্রজনন কেন্দ্র হলে সমস্যা কেটে যাবে। এ ছাড়া বনটি ঘিরে স্থানীয় জেলেদের উৎপাতের কারণে হরিণের স্বাভাবিক চলাফেরা ব্যাহত হচ্ছে। বন বিভাগ জানায়, এ এলাকার হরিণগুলো বাচ্চা প্রসব করছে। কিন্তু একশ্রেণির অসাধু মানুষের কারণে হরিণগুলো প্রায়ই বন ছেড়ে লোকালয়ে চলে আসে। এ চরের বাসিন্দা মান্নাফ মিয়া বলেন, কয়েকবার হরিণগুলো দল বেঁধে নদী সাঁতরে লোকালয়ে চলে এসেছিল। পরে বনে পাঠিয়ে দিয়েছেন তারা। বেড়িবাঁধ না থাকায় এ চরের অধিকাংশ এলাকা প্রায় সময়ই জোয়ারের পানিতে ডুবে থাকে। সে সময় হরিণগুলোর জন্য কোনো নিরাপদ আশ্রয় থাকে না। একটিমাত্র মাটির কেল্লা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে এ বনে। হরিণগুলোর নিরাপত্তা, বসবাস ও বাচ্চা প্রসবের জন্য বনের মধ্যে আরও কেল্লা তৈরি করা দরকার। বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সোলায়মান হাওলাদার বলেন, হরিণ বসবাসের জন্য উঁচু টিলা, পুকুর খনন ও নিরাপদ আশ্রয় দরকার। হরিণ মিষ্টি পানি পান করে। কিন্তু এই বন সব সময় জোয়ারের লোনা পানিতে ডুবে থাকে। সে কারণে প্রজনন কেন্দ্রের পাশেই মিষ্টি পানির পুকুর খনন করার কাজ শুরু হয়েছে।

সর্বশেষ খবর