শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
নির্বাচন বিশ্লেষকদের অভিমত

মডেল হয়ে থাকবে রংপুর সিটি নির্বাচন

গোলাম রাব্বানী

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য রংপুরের ভোট মানদণ্ড হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, কোনো ধরনের গোলযোগ, সহিংসতা, কারচুপি ও অনিয়ম না থাকায় রংপুর সিটি নির্বাচনকে ‘মডেল’ নির্বাচন বলা যায়। আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য সব স্থানীয় সরকারের নির্বাচন এমন হলে বর্তমান ইসির গ্রহণযোগ্যতা, আস্থা বাড়বে রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে। সেই সঙ্গে আগামী সংসদ নির্বাচনসহ অন্যান্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাড়বে বলেও প্রত্যাশা বিশ্লেষকদের। রংপুরের নির্বাচনে বেশ কয়েকটি কেন্দ্র থেকে বিএনপির প্রার্থীর এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়েছে বলে দলটি অভিযোগ করলেও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ওই ‘অভিযোগ সঠিক নয়। রংপুরে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট হয়েছে; একটি মডেল নির্বাচন হয়েছে।’

বৃহস্পতিবার রংপুর সিটি করপোরেশনে বছরের শেষ স্থানীয় সরকারের বড় এ নির্বাচন হলো। ১৯৩ কেন্দ্রে ভোট হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপির প্রার্থীসহ মেয়র পদে ৭ জন অংশ নেন এ ভোটে। দলীয় প্রতীকে রসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা লাঙ্গল প্রতীকে ১ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৯ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। তার চেয়ে ৯৮ হাজার ৮৯ ভোট কম পেয়ে হার মানতে হয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুকে। নৌকা প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৬২ হাজার ৪০০ ভোট। মেয়র পদে ভোটে তৃতীয় হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী কাওসার জামান বাবলা। ধানের শীষ প্রতীকে তার ভোট ৩৫ হাজার ১৩৬। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের পর নিজেদের মেয়াদের এক বছরের মাথায় রংপুরে আরেকটি দৃষ্টান্তমূলক ভোট করল কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসি। যাদের অধীনে একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী বছরের শেষ দিকে। সংসদের আগে জুনের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচন, উত্তর-দক্ষিণে ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট সিটি করপোরেশনেরও ভোট করতে হবে এ ইসিকে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রংপুর নির্বাচন সুন্দর হয়েছে। সংসদ নির্বাচনসহ বড় বড় নির্বাচন কেমন হয় তা দেখার বিষয়। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা, বলিষ্ঠতা শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যেমন অপরিহার্য, তেমনি প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণও ভালো নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন। আগামী সব নির্বাচন রংপুরের মতো হবে বলে প্রত্যাশা করেন এই নির্বাচন বিশ্লেষক। ভোট নিয়ে প্রতিক্রিয়ায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থাগুলোর মোর্চা ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আবদুল আলীম বলেন, কোনো সহিংসতা নেই, অনিয়ম নেই, কারচুপি নেই। সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোয় যে চিত্র দেখেছি রংপুরে তা ছিল না। এককথায় বলা যায়, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। এটি নির্বাচন কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াবে বলে মনে করেন তিনি। রংপুর সিটি নির্বাচনে কোনো ধরনের গোলযোগ, সহিংসতা, কারচুপি ও অনিয়ম না থাকায় রংপুর সিটি নির্বাচনকে ‘মডেল’ নির্বাচন বলতে চান ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পরিচালক আবদুল আলীম। তিনি বলেন, রংপুরের নির্বাচন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতি সব ধরনের অংশীজনের আস্থা বাড়াবে। রংপুরের ভোটটি একটি সমন্বিত নির্বাচন হয়েছে। সুষ্ঠু ভোটের জন্য যা যা করা দরকার, তাতে সবার সহযোগিতা ছিল। এটাকে মডেল নির্বাচনও বলা যায়। এরকম নির্বাচনই মানুষ প্রত্যাশা করে। তবে রংপুরে নির্বাচনের ফল নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগাম কোনো বিশ্লেষণ করাও যাবে না বলে জানান তিনি। আবদুল আলীম বলেন, স্থানীয় নির্বাচনে স্থানীয় ভোটারদের একটি ফ্যাক্টর কাজ করে, স্থানীয় বিশেষ লোকের, নিজ এলাকার ভোটারদের একটি সম্পর্ক রয়েছে। এটা নিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আবহে এনালাইসিস করা যাবে না।

সর্বশেষ খবর