শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

মদনটাকের ঘরে চার অতিথি

মাহবুবুর রহমান, শ্রীপুর (গাজীপুর)

মদনটাকের ঘরে চার অতিথি

বাংলাদেশের দুর্লভ পাখির মধ্যে অন্যতম মদনটাক। আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মদনটাক পাখি আজ বিলুপ্তের পথে। জায়গা করে নিয়েছে মহাবিপন্ন প্রাণীর তালিকায়। আর এ প্রাণী মদনটাককে ঘিরে গাজীপুরের শ্রীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বইছে আনন্দের বন্যা। মদনটাকের ঘরে চারটি নতুন অতিথি জন্ম নিয়েছে। নতুন অতিথিদের বিশেষ যত্নে লালন করছে তাদের মা-বাবা। নতুন অতিথিদের ঘিরে পার্কের দর্শনার্থীদের মধ্যেও ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে। সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী পরিদর্শক আনিছুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক প্রতিষ্ঠালগ্নে ৬টি মদনটাক পাখি সংগ্রহ করা হয়। এ থেকে নভেম্বরে দুটি ও চলতি মাসে দুটি বাচ্চা পাওয়া গেছে। আবদ্ধ পরিবেশে মদনটাকের বাচ্চা দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। মদনটাক মূলত জলচর পাখি হিসেবে পরিচিত। মাছ, ব্যাঙ, সরীসৃপ, কাঁকড়া, বিভিন্ন জলজ প্রাণী এদের প্রধান খাদ্য। প্রজনন মৌসুম ব্যতীত একাকী নিভৃতচারী পাখি হিসেবে এরা পরিচিত। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি উঁচু গাছের মগডালে ডালপালা দিয়ে বাসা বানিয়ে এরা ডিম পাড়ে। স্ত্রী জাতীয় মদনটাক তিন থেকে চারটি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ২৮ দিন পরই ডিম থেকে ফুটে বাচ্চা। তিনি বলেন, মদনটাকের মূল অস্তিত্ব দক্ষিণ এশিয়াজুড়েই। তবে বাংলাদেশে বিভিন্ন এলাকায় বিলুপ্ত হয়ে গেলেও সুন্দরবন প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের মাঝে মধ্যে দেখা যায়। ইতিমধ্যে সিঙ্গাপুর ও চীন থেকে এরা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সাফারি পার্কের বন্যপ্রাণী রক্ষক রিপন কান্তি পাল জানান, প্রাপ্তবয়স্ক পাখির পিঠের দিক উজ্জ্বল কালো। শরীর সাদা বর্ণের হয়। ডানার গোড়ায় কালো রং থাকে। পালকহীন মুখের চামড়া ও ঘাড় লালচে। গলা হলদে বা লালচে। চোখ সাদা কিংবা স্টেট-ধূসর। পা লম্বা। পায়ের পাতা, নখর ও পা সবুজে-ধূসর থেকে স্টেট কালো। স্ত্রী ও পুরুষ পাখি দেখতে একই রকম। অপ্রাপ্তবয়স্ক পাখির মাথা ও ঘাড়ে বিক্ষিপ্ত ঘন পালক থাকে। পিঠ অনুজ্জ্বল কালো বর্ণের হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, মদনটাকের বাচ্চা দেওয়া একটা খুশির সংবাদ। পাখিটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এদের খাবার, বসবাসের জায়গা নষ্ট হয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তন, ইকো সিস্টেম ও ফুড চেইনে কিছু সমস্যা হওয়ায় এদের অস্তিত্ব আজ বিপন্নের পথে। এদের বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে মদনটাকের অস্তিত্ব রক্ষা করা যাবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মোতালেব জানান, মদনটাক পাখির চারটি বাচ্চা পাওয়ায় তা আশার আলো দেখাচ্ছে। এভাবে বংশবৃদ্ধি ঘটলে মহাবিপন্নের তালিকা থেকে মদনটাক রক্ষা পাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর