মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

দাবি মানার আশ্বাসে শিক্ষকদের আমরণ অনশন স্থগিত

নিজস্ব প্রতিবেদক

দাবি মানার আশ্বাসে শিক্ষকদের আমরণ অনশন স্থগিত

রাজধানীতে গতকাল অনশনরত শিক্ষকদের একাংশ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পরেই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের বেতনস্কেল নির্ধারণের দাবিতে চলমান অনশন গতকাল স্থগিত করেছেন আন্দোলনরতরা। গতকাল বিকালে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষকরা অনশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেন। পরে মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, গণশিক্ষা সচিব আসিফ-উজ-জামান ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশনরত শিক্ষকদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি তপন কুমার মণ্ডল গত সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় এসব তথ্য জানিয়েছেন। তবে দাবি পূরণ না হলে আবারও কর্মসূচি পালন করা হবে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক মহাজোটের ডাকে গত শনিবার থেকে এ কর্মসূচি চলছিল। তপন কুমার জানান, শিক্ষকদের ১৩ জনের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল বিকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে মন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে মন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। মোস্তাফিজুর রহমান শিক্ষকদের বলেন, শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে আমি একমত আছি। তবে আপনাদের দাবি মেনে নিতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরের সম্মতির প্রয়োজন রয়েছে। দাবি আদায়ের জন্য আপনাদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করব। এর জন্য আপনারা শিক্ষকদের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাবনা দেবেন। আশা করছি এক মাসের মধ্যে আপনাদের দাবির ব্যাপারে কার্যক্রম শুরু হবে। শিক্ষকদের এ দাবির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি আছে এমনটিও শিক্ষক নেতাদের জানান প্রাথমিক ও গণ শিক্ষামন্ত্রী।

সন্ধ্যায় মোস্তাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিয়ে আন্দোলন নিরসন করার কর্তৃত্ব আমার একার নেই। এটা ঠিক করবে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়। শিক্ষকদের যদি প্রাপ্যতা থাকে তবে শিক্ষকদের দাবি আদায়ে তাদের সঙ্গে আমিও থাকব। সরকারের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই শিক্ষকদের দাবি মেনে নিতে, যোগ করেন তিনি। শিক্ষক নেতারা জানান, তারা মন্ত্রীর কাছে চার দফা দাবি জানিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে— প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১০ গ্রেডে বেতন স্থগিত করে একসঙ্গে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নির্ধারণ করা, নতুনভাবে একসঙ্গে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নির্ধারণ, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের গ্রেডের মধ্যে যে বৈষম্য ছিল তা দূরীকরণ করতে হবে। প্রাথমিকের শিক্ষক প্রতিনিধি দলের একটি কমিটি প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী, সচিব ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে শিক্ষকদের সমস্যাগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে।

গতকাল বিকালে অনশনরত শিক্ষকদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন নবগঠিত যুক্তফ্রন্ট চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, শিক্ষকদের ন্যায়সংগত আন্দোলনকে খাটো করে দেখবেন না। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন যুক্তফ্রন্ট নেতা জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন। এ ছাড়া নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে শিক্ষকদের আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেন কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের হাত ধরেই ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, অর্থনীতিবিদ তৈরি হয়। এই শিক্ষকদের অবহেলা করা মানে সমগ্র জাতিকে অবহেলা করা।

গত শনিবার থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ অনশন চলছিল শিক্ষকদের। কর্মসূচিতে গত তিন দিনে অন্তত অর্ধ শতাধিক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, মহাজোটের অধীনে সহকারী শিক্ষকদের কয়েকটি সংগঠনের ব্যানারে অগণিত শিক্ষক দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে যোগদেন অনশন কর্মসূচিতে।

শিক্ষকরা বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের বেতন গ্রেডে এক ধাপ পার্থক্য ছিল। পরে ২০০৬ সালে এসে দুই ধাপ পার্থক্য সৃষ্টি হয়। ২০১৪ সালে তিন ধাপ পার্থক্য তৈরি হয়েছে। প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে উন্নীত হলেও সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডেই রয়ে গেছেন। ২০ বছর চাকরি করার পর একজন সহকারী শিক্ষক যে বেতন পান, একজন প্রধান শিক্ষক চাকরির শুরুতেই সেই টাকা পান। এর ফলে পেনশন পাওয়ার ক্ষেত্রে তারা বৈষম্যের শিকার হন। এটি আমাদের অপমানজনক আর বৈষম্যের। এ বৈষম্য অবিলম্বে দূর করার দাবি শিক্ষকদের।

সর্বশেষ খবর