মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক

রাকাব, বিকেবি, বিডিবিএল ও বেসিককে নিয়ে তৈরি হচ্ছে সারসংক্ষেপ

মানিক মুনতাসির

অব্যাহত লোকসান ঠেকাতে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের চার ব্যাংক একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠাতে এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করছে অর্থ বিভাগ। প্রথমে এটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো হবে। তিনি এতে সম্মতি দিলে পরে তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে। এরপর তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হবে। কেননা ব্যাংক একীভূত করার দায়িত্ব হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তথ্যমতে, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক (বিকেবি), রাজশাহী কৃষি  উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব), বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডকে (বিডিবিএল) একীভূত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেননা গত পাঁচ বছরে এসব ব্যাংকের পেছনে সরকার লোকসান দিয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু বেসিক ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি মেটাতে পাঁচ বছরে সরকারি কোষাগার থেকে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বিডিবিএলে লোকসান দিতে হচ্ছে না বলে জানা গেছে। শুধু ২০১৬ সালে বিকেবি আর রাকাবের পেছনে ৪১৮ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে সরকার।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, এই ব্যাংক চারটিকে একীভূত করতে ইতিমধ্যে ১১৩টির মতো সুপারিশ জমা পড়েছে। এগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এসব সুপারিশের মধ্যে একটিতে বলা হয়েছে, সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ২১৩টি শাখা পরিচালনায় সমস্যা হচ্ছে না। সেখানে বিডিবিএলের ৪২টি এবং বেসিক ব্যাংকের ৬৮টি শাখার জন্য আলাদা এমডি, ডিএমডির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু তা ভেবে দেখা দরকার। এ ছাড়া সোনালী ব্যাংক যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে বেসিক, বিডিবিএল, রাকাব এবং বিকেবিও একই কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে সোনালী ব্যাংকের মতো একটি বড় ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও এসব ব্যাংকের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এসব ব্যাংককে অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করলে একদিকে যেমন কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে সরকারের খরচও কমবে। শুধু তাই নয়, সরকার যে প্রতি বছর এসব ব্যাংকের পেছনে লোকসান দিচ্ছে তা-ও বন্ধ হবে। তবে ব্যাংকগুলো কোন প্রক্রিয়ায় একীভূত হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের জনবল মূলধন কীভাবে একীভূত করা হবে সে বিষয়ে নীতিমালা প্রয়োজন। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ৭২ শতাংশ ব্যাংক কর্মকর্তা মনে করেন বর্তমানে দেশে যত সংখ্যক ব্যাংক রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, এক জরিপে অংশ নেওয়া ব্যাংকারদের মধ্যে ৭২ শতাংশ মনে করেন ব্যাংকের সংখ্যা কমানো উচিত। আর মতামত প্রদানকারী ১১ শতাংশ ব্যাংকার মনে করেন ব্যাংকের বর্তমান সংখ্যা ঠিক আছে। মন্তব্য করতে রাজি হননি ১৭ শতাংশ ব্যাংকার।

অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, গত ২৬ আগস্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের করা এসব পুনর্গঠনের বিষয়ে ১১৩টি সুপারিশ এসেছে। এসব সুপারিশের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে একীভূতকরণ। সুপারিশগুলো পর্যালোচনা করে এক দফা বৈঠকও করেছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। শিগগিরই আবার পর্যালোচনা বৈঠক করে এসব সুপারিশ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জন্য সারসংক্ষেপ চূড়ান্ত করবে। ইতিমধ্যে এর খসড়া অর্থমন্ত্রীকে দেখানো হয়েছে। তিনি সেখানে কিছু পরিবর্তন ও পরিবর্ধন আনার পরামর্শ দিয়েছেন। এটি চূড়ান্ত করা হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। তবে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংক একীভূত করার দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংককে বলা হয়েছে আগামী এক বছরের মধ্যে যেন একীভূতকরণের একটি আইনের কাঠামো দাঁড় করানো হয়। এরপরই সরকারি ব্যাংকের একীভূতকরণের কাজ শুরু করা হতে পারে।

ব্যাংকাররা বলছেন, সরকারি ব্যাংকের মালিক সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন ও নীতি অনুসারে একীভূত করায় আইনি কোনো বাধা নেই। তবে একীভূত হলেও এসব ব্যাংকের সমস্যা সমাধান হবে না। ব্যাংকগুলোর সমস্যা নন-পারফরমিং লোন এবং ঋণ দিলে ঋণ আদায় হয় না। এ জন্য সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দিতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকগুলোকে একীভূত করলেই যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, তা নয়। তবে লোকসান হয়তো কমবে। এ জন্য ব্যাংক খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা একান্ত প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর