মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
১২ জানুয়ারি শুরু বিশ্ব ইজতেমা

পাকিস্তানসহ ১০ দেশের নাগরিক সম্পর্কে সতর্ক থাকার নির্দেশ

মোস্তফা কাজল

আসন্ন বিশ্ব ইজতেমাকে কেন্দ্র করে ১০ দেশের নাগরিকদের বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নজরদারি বাড়াতে নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ কারণে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানসহ ১০ দেশের নাগরিকদের ভিসা প্রদান ও চলাফেরার ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়ে এ বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া তাবলিগ জামাতের কেন্দ্রস্থল কাকরাইল মসজিদের আমির এবং ইজতেমার সংগঠকদের প্রশাসন পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজধানীর উপকণ্ঠের টঙ্গীর তুরাগ তীরে আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের সবচেয়ে বড় আয়োজন ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা। বিদেশি ২৫ হাজারসহ ১০ লক্ষাধিক মুসল্লি এবারের ইজতেমায় অংশ নেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে। জামায়াত-শিবিরসহ সরকারবিরোধী নাশকতাকারীরা তাবলিগ জামাতের ছদ্মবেশে নিজেদের আড়াল করছে। তারা ইজতেমা মাঠেও নাশকতা চালাতে পারে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে কাকরাইলের কেন্দ্রীয় মসজিদের তাবলিগ সংগঠকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। দেশে চলমান কয়েকটি জঙ্গি ঘটনার প্রেক্ষাপটে এবারের ইজতেমার নিরাপত্তায় নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। দুই পর্বের এ ইজতেমাকে ঘিরে থাকছে এক সপ্তাহব্যাপী বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে শুরু হয়েছে এ কার্যক্রম। পুলিশ ও র‌্যাব সদর দফতর সূত্র জানায়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এবারের ইজতেমায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে এ বিষয়ে সরকারকে আগাম তথ্য দিয়েছে। গতকাল ধর্ম মন্ত্রণালয় ও তাবলিগ জামাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা ইজতেমার মাঠের সার্বিক কার্যক্রম পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

যে ১০ দেশের ব্যাপারে সতর্কতা : কয়েক দিন আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। চিঠিতে বলা হয়েছে, বিশ্ব ইজতেমায় তাবলিগ জামাতে অন্তত ১০টি দেশের নাগরিকদের আসা ও যাওয়ার ভিসার ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সতর্কতা আরোপ করা দেশগুলো হলো— পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সুদান, সিরিয়া, জর্ডান, মিসর ও ইয়েমেন। সূত্র জানায়, দেশের বাইরের জঙ্গিগোষ্ঠী ছাড়াও দেশের নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ সতর্ক আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সূত্র জানায়, এবার ইজতেমাস্থল টঙ্গীর মাঠসহ আশপাশের এলাকায় ৬০টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা স্থাপন করে প্রায় ২০ হাজার পুলিশ ও র‌্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে। স্ট্র্যাকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরা। ইজতেমা শুরুর তিন দিন আগে থেকে পুরো এলাকা নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। বিদেশি মেহমানদের জন্য থাকবে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা। আকাশ পথে টহল দেবে র‌্যাবের হেলিকপ্টার। ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার মো. গিয়াসউদ্দিন জানান, ১২ জানুয়ারি ফজরের নামাজের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ৫৩তম বিশ্ব ইজতেমা। প্রথম পর্বে তিন দিনের ইজতেমা শুরু হবে ১২ জানুয়ারি। আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ১৪ জানুয়ারি। এরপর দ্বিতীয় পর্বের তিন দিনের ইজতেমা শুরু হবে ১৯ জানুয়ারি। তিন দিন পর ২১ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় পর্বের এই আয়োজন। তিনি জানান, দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেবেন এ ইজতেমায়। প্রতি বছরের মতো এবারও ৩২ জেলাওয়ারি খিত্তায় অবস্থান নেবেন মুসল্লিরা। তুরাগ তীরবর্তী ১৬০ একর বিস্তৃত ময়দানের উত্তর-পশ্চিমে তৈরি হচ্ছে বয়ান মঞ্চ। পশ্চিম প্রান্তে তৈরি করা হচ্ছে বিদেশি মেহমানদের থাকার ঘর। আগামী সপ্তাহ থেকে বিদেশি মেহমানরা ইজতেমায় আসতে শুরু করবেন।

সর্বশেষ খবর