শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

পরকীয়ার বিরোধে খুন হন কুলসুম

মাহবুব মমতাজী

ঘটনাটি গত ২২ মার্চ রাতের। একটি বস্তাবন্দী লাশের খবর পায় বিমানবন্দর থানা পুলিশ। খিলক্ষেত টানপাড়া এলাকার ইটের প্রাচীর সংলগ্ন নর্দমার পাশে ফাঁকা জায়গায় শনাক্ত করা হয় এক তরুণীর মস্তকবিহীন লাশ। বয়স আনুমানিক ২৮। নিহত বিবস্ত্র। হাত-পা গামছা দিয়ে বাঁধা। দেহ থেকে মাথা আলাদা থাকায় তাত্ক্ষণিকভাবে তার পরিচয় মেলে না। অনেকটা ঘোলা পানিতে শিকারে নেমে পড়লেন তদন্ত কর্মকর্তারা। পরে লাশের আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হলো। এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় হত্যা মামলা হয়। পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশও মাঠে নামে। লাশ পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে। সেখানে ময়নাতদন্তে নিহতের ডিএনএ ও ভ্যাজাইনাল সোয়াব সংগ্রহ করে রাখা হয়। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে ওই অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশের পরিচয় জানা যায়। লাশটি গার্মেন্টস কর্মী কুলসুম আক্তারের। তিনি পল্লবী থানা এলাকার মিরপুর-১২ এর মোল্লার বস্তিতে থাকতেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার মুজুরদিয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমানের মেয়ে। পরিচয় পেয়ে ফরিদপুর চলে যায় পুলিশের তদন্ত টিম। সংগ্রহ করে তার ব্যবহারিত মোবাইলফোন নম্বর।

জানা যায়, এনামুলসহ দুজনের সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল কুলসুমের। এ নিয়ে বিরোধের জের ধরেই তাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তবে প্রেমিক এখনো শনাক্ত হয়নি। ঘটনার প্রায় ৯ মাস পর কুলসুমের কললিস্ট ধরেই এনামুলকে খুনি হিসেবে চিহ্নিত করে পুলিশ। ওই কললিস্টের সূত্রই বলে দেয়— লাশ উদ্ধারের কিছু সময় আগ পর্যন্ত খিলক্ষেত এলাকায় এনামুলের অবস্থান ছিল। এ বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এনামুল পুলিশকে জানায়— তিনি ঘটনার দিন কুলসুমকে নিয়ে কুর্মিটোলা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। এনামুল তাকে কোথায় নিয়ে কীভাবে হত্যা করলেন সে বিষয়ে কোনো স্বীকারোক্তি দেয়নি।

বিমানবন্দর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এজাজ শফী এ প্রতিবেদককে জানান, স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় কুলসুম একা থাকতেন মোল্লার বস্তিতে। এর মধ্যে এক ব্যবসায়ীর গাড়িচালক এনামুলের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একই সময়ে আরও একজনের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ান। একপর্যায়ে এনামুল বিষয়টি জানতে পারে। অন্য কারও সঙ্গে নিজের প্রেমিকার সম্পর্কের বিষয়টি মেনে নিতে না পেরে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায়। পরে নিহতের পরিচয় লুকানোর উদ্দেশে মাথা আলাদা করে লাশ ওই স্থানে ফেলে চলে যায়। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ঘটনার কিছুদিন পরই হত্যায় জড়িত সন্দেহে এনামুল হককে পল্লবী থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারও গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানা এলাকায়। তবে সে পল্লবীর পাঁচ নম্বর রোড এলাকায় থাকত। তার ডিএনএ নমুনার সঙ্গে কুলসুমের লাশের থেকে সংগ্রহ করা ডিএনএ নমুনার প্রোফাইল মিলে যায়। এ মামলা বর্তমানে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তদন্তাধীন।

সর্বশেষ খবর