সারা দেশে ঘন কুয়াশায় সড়ক-আকাশ এবং নৌপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কুয়াশার কারণে গতকাল বঙ্গবন্ধু সেতুতে ১৫টি গাড়ির সংঘর্ষ হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচলও ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ থেকেছে। মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে সা?ড়ে ১১ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। আবহাওয়া অফিস বলছে, পৌষের শীতে মধ্যরাত থেকেই ঢাকাসহ সারা দেশে কুয়াশা পড়ছে। মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা দেশের কোথাও কোথাও আজও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। তবে সারা দেশের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ দক্ষিণ আন্দামান সাগর এবং তত্সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার এবং তত্সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে দেশের আকাশ অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকবে।
শাহজালালে বিমান চলাচল ব্যাহত : ঘন কুয়াশার কারণে ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর গতকাল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে শুরু হয় সব ধরনের ফ্লাইটের চলাচল। রাত ২টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে সব ধরনের ফ্লাইট চলাচল বন্ধ ছিল। সকালে কয়েকটি ফ্লাইট অবতরণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। এ সময় ছেড়ে যেতে পারেনি কোনো বিমানও। ফলে বিমানবন্দরে অপেক্ষার প্রহর গুণতে হয় যাত্রীদের। তবে রোদ ওঠার সঙ্গে সঙ্গে বিমান চলাচল স্বাভাবিক হতে থাকে।
বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের পরিদর্শক এ এস এম জাহিদ আরিফ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে গতকাল রাত ২টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত বিমান চলাচল বন্ধ ছিল। ১০টার পর বিমান চলাচল শুরু হয়। তবে বেশ কয়েকটি ফ্লাইটের শিডিউল পরিবর্তন করা হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, রিজেন্ট, নভোএয়ার ও ইউএস বাংলাসহ কয়েকটি বিমান পরিবহন সংস্থার ফ্লাইটের শিডিউল পরিবর্তন করা হয়। শিডিউল বিলম্বের শিকার যাত্রীরা বিমানবন্দরে দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করেন। এর আগে বৃহস্পতিবারও ঘন কুয়াশার কারণে শাহজালাল বিমানবন্দরে ৫ ঘণ্টা বিমান চলাচল বন্ধ ছিল।টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঘন কুয়াশার মধ্যে চলাচলের সময় গতকাল পরপর ১৫টি গাড়ির সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২৫ জন আহত হয়েছেন। ভোর ৬টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আছাবুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার পর আহতদের উদ্ধার করে টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার দিনগত মধ্যরাত থেকেই বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচল ছিল অত্যন্ত ধীরগতির। গতকাল ভোর ৬টা থেকে যান চলাচলে গতি ফিরতে শুরু করলে ঢাকাগামী লেনের একটি বাসের পেছনে অন্য একটি বাস ধাক্কা দেয়। এ সময় এর পেছনে থাকা আরও ১৩টি বাস একটি অন্যটিকে ধাক্কা দেয়। এতে বেশ কয়েকটি বাসের সামনের অংশ ভেঙে যায়। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন ২৫ জন। ট্রাক-বাস মিলিয়ে ১৫টি গাড়ির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পূর্ব থানার ওসি আছাবুর রহমান জানান, ঘন কুয়াশার কারণে বঙ্গবন্ধু সেতুতে যান চলাচলে স্থবিরতা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতু দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথের ফেরি চলাচল। ফলে মাঝ পদ্মায় দুই শতাধিক যানবাহন নিয়ে আটকে থাকে চারটি ফেরি। পারাপারের অপেক্ষায় মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে আটকা থাকে ছোট-বড় চার শতাধিক যানবাহন। এতে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীসহ ব্যবসায়ীদের। শিমুলিয়া ঘাট বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ জানান, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কুয়াশার তীব্রতা বাড়তে থাকায় ঝুঁকি এড়াতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, ঘন কুয়াশার কারণে মা?নিকগঞ্জের পাটুরিয়া ও রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া নৌপথে সাড়ে ১১ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল শুরু হয়। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যাল?য়ের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এজিএম) না?ছির মোহাম্মদ চৌধুরী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যারা?ত থেকেই পদ্মায় কুয়াশা পড়তে থাকে। রাত সা?ড়ে ১১টার দিকে কুয়াশার মাত্রা বেড়ে গেলে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি, লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ রাখা হয়। কুয়াশা কাটার পর গতকাল বেলা ১১টায় ফের ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়। ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় নদীর দুই পাড়ে পারাপারের অপেক্ষায় আটকা পড়ে ছয় শতাধিক যানবাহন।