সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত চার খুনির মুক্তিযোদ্ধা খেতাব বাতিল হচ্ছে

মোস্তফা কাজল

মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বসূচক খেতাবগুলো পুনর্মূল্যায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। আসছে ২৬ মার্চের আগেই এ বিষয়ে ঘোষণা আসছে। এক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর মতো বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদেরও বেশি সংখ্যায় খেতাবে ভূষিত করা হতে পারে। এমনকি খেতাব প্রাপ্তির ক্ষেত্রে যুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধকারী পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাও বঞ্চিত হয়েছেন। বিষয়টিও এবার বিবেচনায় আনতে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে বাতিল করা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার মুক্তিযুদ্ধের খেতাব। একাত্তরে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরবিক্রম ও বীরপ্রতীক এই চার ধরনের উপাধি দিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উদ্যোগের অংশ হিসেবে সব খেতাবই পুনর্মূল্যায়ন করবে সরকার। এক্ষেত্রে সরকার মনে করে, খেতাবের বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন। নইলে রাজনৈতিক নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ একসময় বিশ্বের কাছে সামরিক যুদ্ধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

১৯৭১ সালের ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম, অজস্র ত্যাগ-তিতিক্ষার ফল আমাদের কষ্টার্জিত মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতার জন্য সর্বস্তরের মানুষ লড়েছে। প্রাণ দিয়েছে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য দেওয়া খেতাবগুলোর বেশিরভাই সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্যরা পেয়েছেন। ফলে সর্বস্তরের এই জনযুদ্ধ অদূর ভবিষ্যতে সামরিক যুদ্ধ হিসেবেও আখ্যায়িত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ উদ্যোগটি নিতে বর্তমান সরকার ও আমার মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটি সারসংক্ষেপ মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করতে যাচ্ছে শিগগিরই। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা অবদান রেখেছিলেন, তাদের মধ্যে থেকে অবদানের ভিত্তিতে সরকার সাতজনকে বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ জনকে বীরউত্তম, ১৭৫ জনকে বীরবিক্রম ও ৪২৬ জনকে বীরপ্রতীক উপাধিতে ভূষিত করে। এই সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ছাড়াও ৬৮ জন বীরউত্তম খেতাবপ্রাপ্তদের মধ্যে ৬৬ জন বিভিন্ন বাহিনীর সদস্য। এখানে মাত্র দুজন রয়েছেন বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা। ১৭৫ জন বীরবিক্রমের মধ্যে ১৩৭ জন বিভিন্ন সামরিক বাহিনীর সদস্য এবং ৩৮ জন গণবাহিনী (মুক্তিযোদ্ধা, গেরিলা, মুজিব বাহিনী) ও পুলিশের সদস্য। বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যা ৪২৬ জন। এর মধ্যে মুক্তিবাহিনীর সদস্য ১২০ জন ও সামরিক বাহিনীর সদস্য ৩০৬ জন। ১৯৭৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের একটি অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই খেতাব প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়। এরপর মুক্তিযুদ্ধের বাইরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বাঁচাতে গিয়ে নিজ বাহিনীর বিপদগামী কিছু সেনা সদস্যের হাতে নিহত হন কর্নেল জামিল আহমেদ। ২০১০ সালে তাকে বীরউত্তম খেতাব প্রদান করা হয়। এ ছাড়া স্বাধীনতার পর এ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও অন্যান্য স্থানে পরিচালিত অপারেশনে সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমানে বিজিবি) ১২৬ জন বীরত্বসূচক খেতাব পেয়েছেন। এদিকে সশস্ত্র বাহিনীর বাইরে স্বল্পসংখ্যক বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধা পদক পাওয়ার ঘটনা নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচিত হয়।

সর্বশেষ খবর