সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

অনাবাদি কেওলার হাওরে ধান আবাদের চমক

দীপংকর ভট্টাচার্য লিটন, শ্রীমঙ্গল

অনাবাদি কেওলার হাওরে ধান আবাদের চমক

চমক ও নব দিগন্তের সূচনা হয়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার কেওলার হাওরে। এতদিন শুকনো মৌসুমে যেখানে জমিগুলো আনাবাদি পড়ে থাকত, এখন সেখানে কৃষকরা ধানের আবাদ শুরু করেছেন। এমনকি এই ধান এখন ঘরে তোলার উপযুক্তও হয়েছে।

উপজেলার মুন্সিবাজার, পতনউষার, শমশেরনগর ও আলীনগর ইউনিয়ন নিয়ে এ হাওরের অবস্থান। এখানকার চারটি ইউনিয়নের ৭৩টি গ্রামে প্রায় ২৫ হাজার পরিবারের বসবাস রয়েছে। চারটি ইউনিয়নের মধ্যমণি এই কেওরার হাওর। যদিও এক সময় এ হাওরে আউশ, আমন আর বোরো ফসল ফলানো হতো। কিন্তু পানি নিষ্কাশন আর যাতায়াতের সুবিধা না থাকায় দশ বছর ধরে এখানকার জমি কৃষকরা পতিত ফেলে রাখেন। কারণ কষ্ট করে ফলানো ফসল ঘরে তোলার উপায় ছিল না। ফসল ফলালে তা নিশ্চিত বর্ষার পানিতে তলিয়ে ধ্বংস হতো। মূলত এ কারণেই কেওলার হাওর পরিত্যক্ত ছিল। এই অবস্থায় চলতি বোরো মৌসুমের আগে স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ এমএ শহীদ কৃষকদের দুঃখ লাঘবের জন্য কেওলার হাওর উন্নয়নে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেন। এর আওতায় হাওরের বুক চিরে যাওয়া উপশি ও খাইজান খালটি দৈর্ঘ্যে প্রায় ৩৫০০ ফুট ও প্রস্থে ১৫ ফুট পুনঃখনন করা হয়। আর হাওরের রূপসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে থেকে পূর্্ব দিকে লাঘাটা ছড়ার পাড় পর্যন্ত ২০০০ ফুট রাস্তা পুনসংস্কার করা হয়। এর ফলে হাওর আবার ব্যবহার উপযোগী হয়ে উঠেছে। পতিত জমিগুলো হয়েছে চাষ উপযোগী। গত শনিবার সরেজমিন কেওলার হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, কৃষকরা মনের আনন্দে হাওরে জমি চাষ করছেন। কেউবা চাষকৃত জমিতে ধানের চারা রোপণ করছেন। কেউ কেউ ব্যস্ত বীজতলা থেকে চারা উত্তোলনের কাজে। আরও দেখা গেছে, পতিত জমি জুড়ে সবুজ ধানের বিপুল সমারোহ। জানা গেছে, কেবল একটি প্রকল্পই বদলে দিয়েছে কেওলার হাওরের চিত্র। যার ফলে বিস্তীর্ণ হাওরের মাঠ জুড়ে এখন শুধু সম্ভাবনার হাতছানি। কৃষক আবুল বশর জিল্লুল, জুবায়ের আহম্মেদ, শামিম আহম্মেদ, মৌরাজ মিয়া, সিপার মিয়া, আবদুুল হান্নান জানান, এতদিন তারা জমি পতিত ফেলে রাখছিলেন। কিন্তু এখন তারা আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন। চলতি বোরো মৌসুমে তাদের সবাই হাওরে পতিত জমিতে ধান চাষ করেছেন। আর এটা সম্ভব হয়েছে হাওরে পানি নিষ্কাশন আর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেওয়ায়। এখন তারা অনায়াসেই ঠেলায় করে সার, বীজ নিয়ে হাওরের শেষ সীমানা পর্যন্ত যেতে পারবেন।

তবে তারা, লাঘাটা ছড়ায় স্লুইস গেট নির্মাণের দাবি করছেন। একই সঙ্গে বনবিষ্ণপুর ও রামেশ্বরপুরের ধুপাবিল ও কুদালিছড়া, রায়নগরের ঘনিয়ামারা ও খোদিজান ছড়া, মইদাইল ও ভূমিগ্রামের মান্দারছড়া, বাসুদেবপুরের ভাওরকোনা বিল খননেরও দাবি করেন। তারা জানান, এটা না করা হলে পাহাড়ি ঢলে উজান থেকে আসা ছড়ার পানির সঙ্গে পলি মাটি এসে কেওলার হাওর ভরাট হয়ে যাবে। মুন্সিবাজার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মোতাল্লিব এবং পরিষদের সদস্য মো. শফিকুর রহমান বলেন, কেওলার হাওর উন্নয়ন এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ছিল। আজ কেওলার হাওরে প্রাণ ফিরে এসেছে। কৃষকরা ধান চাষ করছেন। এতে শুধু কৃষকরাই লাভবান হবেন না, এখানে উৎপাদিত ফসল দেশের কৃষির উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সামছুউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় এই হাওরে আড়াইশ হেক্টর জমি আনাবাদি থেকে যেত। এ জমিতে এখন থেকে বছরে প্রায় দুই হাজার মেট্রিকটন ধান উৎপন্ন হবে। উপজেলা মত্স্য কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, খাল খননের ফলে হাওরে কৃষির সঙ্গে সঙ্গে মত্স্য সম্পদেরও উন্নয়ন হবে। স্থানীয় সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ এমএ শহীদ বলেন, দেশে কৃষি জমি বৃদ্ধির জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সেই নির্দেশনার আলোকেই আমি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। তাছাড়া এই খালটি খনন করা এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল। খালটি খননের ফলে এই হাওরে এখন মানুষ সারা বছরই তিনটি ফসল ফলাতে পারবে।

সর্বশেষ খবর