প্রস্তাবিত ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া (সাবেক শান্তিনগর-ঝিলমিল) ফ্লাইওভারের নকশা জটিলতা প্রায় কেটে গেছে। দু’এক মাসের মধ্যেই রুটটিও চূড়ান্ত হয়ে যাবে। বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে মূল কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এজন্য চলতি বছরের শেষে হলেও প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চায় সরকার। তবে অর্থায়ন নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। এজন্য দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান খোঁজা হচ্ছে। ইতিমধ্যে দু’একটি প্রতিষ্ঠান আগ্রহও দেখিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিষ্ঠান এখনো প্রস্তাব দেয়নি। এদিকে, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র, মেট্রোরেলসহ বেশ কয়েকটি বৃহৎ প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। নির্বাচনের বছরে আরও কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে চায় সরকার। এরমধ্যে ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া ফ্লাইওভার প্রকল্পটিও তালিকায় রয়েছে। তবে চলমান প্রকল্পগুলো দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া ফ্লাইওভার রুটে কয়েকটি বড় বড় স্থাপনা পড়ায় প্রকল্পটির নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত নকশা অনুমোদিত হবে। সূত্র জানায়, রাজধানীর যানজট নিরসনে এবং যাতায়াত সহজ করতে ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া ছাড়াও আরও দুটি ফ্লাইওভার ও কয়েকটি ইউলুপ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। তবে সংসদ নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় সেগুলোর নকশা, রুট এবং উন্নয়ন পরিকল্পনার (ডিপিপি) অনুমোদনের বিষয়ে ধীরে চল নীতি অনুসরণ করছে সরকার। অবশ্য বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে ইতিমধ্যেই একটি ইউলুপ নির্মাণ করা হয়েছে। আর বাড্ডায় আরেকটি ইউলুপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়া সাম্প্রতিক বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং চালের বাজার নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকট ইস্যুতে সরকার কিছুটা অর্থ সংকটে পড়েছে। এজন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া শুরু করেছে অস্বাভাবিক হারে। যদিও ব্যাংক ঋণ এখনো বাজেটের লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই রয়েছে। এজন্য নির্বাচনের আগে অহেতুক কোনো প্রকল্পের কাজ বাড়িয়ে অর্থ সংকট সৃষ্টি করতে চায় না সরকার। তবে অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো যেন কোনোভাবেই অর্থ সংকটে পিছিয়ে না যায় সেদিকে কড়া নজর রাখছে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো।
জানা যায়, ফকিরাপুল-চুনকুটিয়া ফ্লাইওভারের নির্মাণকাল রাজউকের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদকাল ধরা হয়েছে। নকশা জটিলতা কাটিয়ে ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কো-অর্ডিনেশন অথরিটির (ডিটিসিএ) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে প্রকল্পটি। জানা গেছে, প্রকল্পটি প্রথমে শান্তিনগর থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত হওয়ার কথা থাকলেও পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী এটি ফকিরাপুল আরামবাগ ইন্টারসেকশন থেকে কদমতলী ইন্টারসেকশন হয়ে চুনকুটিয়া পর্যন্ত গিয়ে ল্যান্ডিং পয়েন্ট পৌঁছাবে। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে বৈঠক করেছে রাজউক। ওই সভার কার্যবিবরণী থেকে জানা যায়, পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে তিনটি ১৫ থেকে ২০ তলা ভবন ভাঙতে হবে। সেই সঙ্গে একটি মসজিদ, কবরস্থানসহ ছোট-বড় অনেক স্থাপনা ভাঙতে হবে, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ বলে মনে করে রাজউক। ফলে প্রাক্কলিত ব্যয় যা ধরা হয়েছে তা আরও বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর বিকল্প হিসেবে ভালো কোনো রুট না পাওয়া গেলে প্রস্তাবিত এই রুটে বহাল রেখে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে জানা গেছে। সর্বশেষ নতুন যে নকশা করা হয়েছে সে অনুযায়ী এ ফ্লাইওভারের মোট দৈর্ঘ্য হবে ১২ দশমিক ১ কিলোমিটার। তবে ডিটিসিএর অনুমোদন অনুযায়ী এর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ কিলোমিটার। চার লেনবিশিষ্ট অংশের দৈর্ঘ্য ৭ দশমিক ২২ কিলোমিটার এবং দুই লেনবিশিষ্ট অংশের দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার। পুরো ফ্লাইওভারে আপ র্যাম্পের সংখ্যা থাকবে পাঁচটি আর ডাউন র্যাম্প পাঁচটি। টোল প্লাজা থাকবে তিনটি। এটি পিপিপির ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। পরিবর্তিত নকশা অনুযায়ী ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বাড়লে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়াবে ২ হাজার ৩২১ কোটি টাকা।