মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। এদিকে, প্রত্যাবাসন শুরু করতে শুক্রবার দুপুরে ঢাকায় সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট জেনারেল কিয়াও সোয়ের নেতৃত্বে বৈঠক হয়। জানা গেছে, গতকাল ভোরে ও সকালে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ও বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ১৭ পরিবারের ৬৩ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। টেকনাফের সাবরাং হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে দায়িত্বরত জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও টেকনাফ উপজেলার জ্যেষ্ঠ মত্স্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, গতকাল সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নতুন করে এসেছে ১৭টি পরিবারের ৬৩ জন রোহিঙ্গা। তাদের প্রথমে সেনাবাহিনীর হারিয়াখালী ত্রাণকেন্দ্রে নেওয়া হয়। এরপর মানবিক সহায়তা ও প্রতিটি পরিবারকে চাল, ডাল, সুজি, চিনি, তেল, লবণের একটি করে বস্তা দিয়ে টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জট খুলতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার দুই দেশের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের পর দফার দফায় বৈঠক হলেও ইতিপূর্বে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপের সূচনা হয়নি। তবে মঙ্গলবার বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তে আশ্রয় নেওয়া সাড়ে ৬ হাজার রোহিঙ্গাকে দ্রুত মিয়ানমারে ফেরত নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাবাসন জটিলতা শিথিল হতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত বান্দরবানের ঘুমধুম সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের ডেকুবনিয়ায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং কমিটির এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকের আগে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের মিয়ানমার প্রতিনিধিরা তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় গেলে রোহিঙ্গারা তাদের সীমাহীন দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। উদ্বাস্তু জীবনে তাদের কী নিদারুণ কষ্ট ও মানবেতর দিনযাপন করতে হচ্ছে— তা তুলে ধরেন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুরা। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা একটি মাত্র এজেন্ডা নিয়েই কথা বলেছি এবং এতে কিছুটা সুফলও পেয়েছি। মিয়ানমারের যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে তুমব্রু সীমান্তের মিয়ানমার অংশেই বৈঠক করে তাদের বলেছি— অন্তত সীমান্তের কাছে পড়ে থাকা রোহিঙ্গাদের আপনারা ফিরিয়ে নিন। এর আগে সীমান্তের রোহিঙ্গা বস্তিগুলোতে তাদের নিয়ে সেখানকার দুর্ভোগের চিত্র দেখিয়েছি এবং রোহিঙ্গাদের মুখ দিয়েই বলিয়েছি তারা কী চায়, কী তাদের সমস্যা। এতে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা নমনীয় হন। এটা কিছুটা হলেও আমাদের অর্জন।’