শিরোনাম
সোমবার, ৫ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ছয় খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ভিয়েতনাম

রুহুল আমিন রাসেল

বাংলাদেশে ছয় খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী ভিয়েতনাম। ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন— এফবিসিসিআই এ তথ্য জানিয়েছে। সংগঠনটি বলছে, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি ত্রান দাই কুয়াংয়ের ঢাকা সফর উপলক্ষে চামড়াশিল্পের সহযোগী খাতে দেশটির ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ চূড়ান্ত হয়েছে। পাশাপাশি টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষিজাত, হিমায়িত খাদ্য ও খাবার প্রক্রিয়াকরণ খাতে ভিয়েতনাম যেসব বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে, তার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগামীকাল দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যকার বৈঠকে এসব বিষয় চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। একইসঙ্গে ভিয়েতনামে পোশাক কারখানা স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গত সপ্তাহে আমরা ভিয়েতনামে গিয়েছিলাম।

সে দেশের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ও শীর্ষ ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠকে বিনিয়োগে তাদের ব্যাপক আগ্রহের কথা জেনেছি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে তাদের উদ্বেগও আছে। আমরা বাংলাদেশের বেশকিছু সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেছি। তিনি বলেন, ভিয়েতনাম আমাদের পরে স্বাধীন হলেও, অনেক কিছুতে দেশটি এগিয়ে আছে।

এফবিসিসিআইর প্রথম সহসভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ভিয়েতনামে পোশাকশিল্প খাতে বাংলাদেশের বিনিয়োগের সুযোগ আছে। ভিয়েতনামের ৪৫টি বৃহৎ ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ঢাকা সফরে এসেছেন। তারা চামড়াশিল্প, টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষিজাত, হিমায়িত খাদ্য, খাবার প্রক্রিয়াকরণ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী। টেলিটকের সঙ্গে ভিয়েতনামের পিপিপির আওতায় চুক্তি হতে পারে। তথ্যমতে, ঢাকা সফরে আসা ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি ত্রান দাই কুয়াংয়ের ১০০ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে ৪৫ জন শীর্ষ ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি রয়েছেন। তাদের সঙ্গে আগামীকাল ৬ মার্চ রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দিনভর বৈঠকে বসবেন কয়েকজন মন্ত্রী, ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও কয়েকটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ ব্যক্তি। বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম বিজনেস ফোরামে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করবেন সফররত সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি ত্রান দাই কুয়াং। এই বিজনেস ফোরামে আরও অংশ নেবেন ভিয়েতনামের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফাম বিনহ মিনহ, পরিকল্পনা ও বিনিয়োগমন্ত্রী নঙুয়েন চি ডুঙ, রাষ্ট্রপ্রতির কার্যালয়ের প্রধান ও মন্ত্রী দাও ভিইট ট্রুঙ, কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী নঙুয়েন জিয়ুন চুওঙ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপমন্ত্রী চাও কুওক হুনঙ এবং ঢাকায় নিযুক্ত ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত। এই ফোরামে খাতভিত্তিক সম্ভাবনা চিহ্নিত করে বিনিয়োগ ও যৌথ বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখছে এফবিসিসিআই। ব্যবসায়ীরা মনে করেন— এদেশে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের জন্য কর অবকাশ ও করপোরেট কর সুবিধা রয়েছে। এই সুবিধা ভিয়েতনামের ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক, ওষুধ, কৃষি যন্ত্রপাতি, সিরামিক, হালকা প্রকৌশল শিল্প ইত্যাদি খাতে যৌথ বিনিয়োগ এবং প্রযুক্তি হস্তান্তরের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ালে উভয় দেশের অর্থনীতিই লাভবান হবে। অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা বিদেশিদের জন্য সহজ এবং লাভজনক। তবে দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান বাণিজ্য ব্যবধান কমাতে যথেষ্ট কাজ করার সুযোগ রয়েছে। জানা গেছে, ভিয়েতনামে ৩৪৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ছয় গুণেরও বেশি বাণিজ্য ঘাটতি নিয়ে পিছিয়ে বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে এদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পের অন্যতম প্রতিযোগীও ভিয়েতনাম। বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে ২০১২ সালে চুক্তি হওয়ার পরও দুই দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যকার যোগাযোগের অভাবে আন্তবাণিজ্য বাড়ছে না। যদিও বাংলাদেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের সম্পর্ক এখন খুবই ভালো এবং এই সম্পর্ক ঐতিহাসিক। মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন স্বীকৃতি দেওয়া শুরু করে তার মধ্যে প্রথম কাতারে ছিল ভিয়েতনাম।

এমনকি বঙ্গবন্ধু সরকারের সময়ে পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যের চক্রান্তে ১৯৭৪ সালে যে দুর্ভিক্ষ হয়, তখনো পাশে ছিল— ভিয়েতনাম। সরকারের অর্থনৈতিক সমীক্ষা, বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি—সিআইএ’র ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত দেখা যায়— বিগত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৬৬ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ভিয়েতনামে রপ্তানি করে। এর বিপরীতে ভিয়েতনাম থেকে ৪১২ দশমিক ২০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ— ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৩৪৫ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন ডলার। যদিও ১০ বছর আগে ভিয়েতনামের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল না। তবে বাণিজ্য ছিল খুবই কম। দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য সমূহের মধ্যে রয়েছে— কৃষিজাত, চামড়াজাত ও প্রকৌশল পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য এবং ওষুধ, খেলনা, ফার্নিচার, বিশেষায়িত বস্ত্র ও নিট ও ওভেন পোশাক এবং প্লাস্টিক সামগ্রী। আর ভিয়েতনাম থেকে মূলত খনিজ দ্রব্য, চাল, বস্ত্র ও বস্ত্র সামগ্রী, যন্ত্রপাতি ও প্লাস্টিক উপাদান, কৃষিপণ্য, প্লাপ, পেপার ও পেপারবোর্ড এবং এয়ারক্রাফট আমদানি করে বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর