বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
সময় এখন নারীর

নেতৃত্বে পিছিয়ে রাজনৈতিক দলে

গোলাম রাব্বানী

নারী নেতৃত্বে পিছিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের ১১ বছর পার হতে চললেও সব স্তরের কমিটিতে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখতে পারেনি সিংহ ভাগ রাজনৈতিক দল। তবে কমিটিতে নারী প্রতিনিধি রাখার ক্ষেত্রে সমান সমান অবস্থানে রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এ ছাড়া অনেক ইসলামী দলে ১ ভাগও নারী নেই। তবে অধিকাংশই দল ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা পূরণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। ২০২০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সব কমিটিতে এক তৃতীয়াংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েই নিবন্ধন নিয়েছে দলগুলো। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে দলগুলোর কাছে অগ্রগতি প্রতিবেদনও চেয়েছে। শর্ত প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে— ৪০টি নিবন্ধিত দলের মধ্যে একটিই মাত্র দল ইতিমধ্যেই ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে ফেলেছে। সব স্তরে ১৫%-২০% নারী প্রতিনিধিত্ব রেখে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, গণতন্ত্রী পার্টি ও জাতীয় পার্টি।

ইসি সচিবালয়ের নির্বাচন সমন্বয় ও সহায়তা শাখার উপসচিব আবদুল হালিম খান ‘নিবন্ধন শর্ত প্রতিপালন সংক্রান্ত প্রতিবেদন’ কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছেন। জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব স্তরে ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ : দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের ৮১ জনের মধ্যে ১৫ জন নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সংসদে দলের ১৬ জন নারীসহ সংরক্ষিত আসন মিলিয়ে ৪২ জন এমপি রয়েছে। বিএনপি : দলের সব স্তরের কমিটিতে ১৫ ভাগ মহিলা সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় পার্টি : সব পর্যায়ের কমিটিতে ২০% নারী নেতৃত্ব রয়েছে। গণফ্রন্ট : দলটি দাবি করেছে সব কমিটিতে ৩৩% মহিলা প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ মুসলিম লীগ : কেন্দ্রীয় কমিটিতে ৬% মহিলা সদস্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা : ইতিমধ্যে ৩৩% কোটার মধ্যে ১২% কোটা পূরণ করা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ পূরণ সম্ভব হবে। গণতন্ত্রী পার্টি : সব স্তরের কমিটিতে ১৫% নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপি : দলটি দাবি করেছে ৩৩% নারী সদস্য সব কমিটিতে নিশ্চিত করা হয়েছে। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি : মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে এখনো আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে এবং নির্ধারিত সময়ে শর্তটি সম্পূর্ণ প্রতিপালন সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ : এখনো ৩৩% নারী প্রতিনিধিত্ব রাখা সম্ভব হয়নি; তবে নির্ধারিত সময়ে পূরণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট : নারী নেতৃত্বে অগ্রগতি রয়েছে।

ইসি সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই তাদের সব পর্যায়ের কমিটিতে ১৫ শতাংশ নারী সদস্য থাকার কথা জানিয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখন নারী প্রতিনিধিত্ব ১৯ শতাংশ বলে দলটি জানিয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব স্তরের কমিটিতে নারী নেতৃত্ব বেড়েছে। এরমধ্যে শুধু ৮১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে সভাপতিসহ ১৫ জন নারী সদস্য রয়েছেন। আর কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব জেলা, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটিতে (গত জুন মাস পর্যন্ত) ১৫ ভাগ নারী রয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে নির্বাচন কমিশনকে এই তথ্য জানানো হয়। চিঠিতে বলা হয়েছে—গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী— আগামী ২০২০ সাল নাগাদ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে তৃণমূল পর্যায়ে সব স্তরে ৩৩ ভাগ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে সক্ষম হবে দলটি।

২০২০ সালের মধ্যে সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত হয়েছিল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো। কিন্তু অধিকাংশ দল লক্ষ্যের অর্ধেকও পূরণ করতে পারেনি। এ অবস্থায় গত ১৩ জুন নিবন্ধিত ৪০টি দলের কাছে ‘নারী প্রতিনিধিত্ব অন্তর্ভুক্তির’ সর্বশেষ তথ্য চেয়ে তাগিদ দেয় ইসি।

ইসিতে বিভিন্ন দলের দেওয়া প্রতিবেদনে দেখা গেছে, জাকের পার্টি জানিয়েছে, তাদের দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখার বিষয়টি গঠনতন্ত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে তারা কাজ করছেন। খেলাফত মজলিস ইসিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের কেন্দ্রীয় বা তৃণমূলের কোনো কমিটিতেই কোনো নারী সদস্য নেই। তবে কমিটিতে নারীদের আনার প্রতিশ্রুতি তারা পূরণ করতে চায়। বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল কেন্দ্রীয় কমিটিতে পাঁচজন নারী রয়েছে। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী সদস্য থাকলেও তৃণমূলে নেই। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কয়েকজন নারী সদস্য রয়েছে। তবে তাদের তৃণমূলের কমিটির অনেক পদ খালি রাখা হয়েছে।

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন লক্ষ্য পূরণে ‘অনেক দূর’ এগিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে বলেছেন, ২০২০ সালের মধ্যেই শর্ত পূরণ করা যাবে। তবে তাতে হয়তো সব কমিটি ‘মানসম্মত’ হবে না। ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্বের শর্ত পূরণের সময় ২০৩০ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে দলটি।

সর্বশেষ খবর