রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
আনোয়ারায় প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র

মাটি চুরির হিড়িক

আনসার সদস্যদের যোগসাজশের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় বঙ্গোপসাগর ও কর্ণফুলী নদীর মোহনায় প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রের জমি থেকে চুরি করে মাটি কেটে তা অন্যত্র পাচার করছে একটি চক্র। ওই জমির নিরাপত্তায় ২০ জন সশস্ত্র আনসার মোতায়েন আছে। এর পরও ড্রাম ট্রাক ভর্তি করে মাটি চুরির সঙ্গে আনসার সদস্যদের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন বিদ্যুেকন্দ্রের কর্মকর্তারা।

মাটি চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রস্তাবিত বিদ্যুেকন্দ্রের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার প্লাটুন কমান্ডার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি চুরি রোধকল্পে গতকাল কর্ণফুলী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (নম্বর ৪০৭) করেন। সাধারণ ডায়েরির বিষয়ে বিদ্যুেকন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দীন বলেন, ‘কর্ণফুলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ ছাড়া আনোয়ারা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। মাটি চুরি রোধে তারা সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’ স্থানীয় সূত্র জানায়, ২০০৯-১০ সালে জেলার আনোয়ারাধীন চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার ফার্টিলাইজার (সিইউএফএল) এলাকার পাশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ঘোষণা দিয়ে বিশাল জমি ক্রয় করেছিল দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক গ্রুপ বসুন্ধরা। পরবর্তী সময়ে কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাটসহ জমির অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়।  কিন্তু ২০১১ সালের জুন মাসে আকস্মিকভাবে ওই জমিতেই সরকার কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের ঘোষণা দেয় এবং জমি পিডিবি দখলে নেয়। এমতাবস্থায় কয়লাভিত্তিক প্রকল্পের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে অবগত হয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা আন্দোলন শুরু করেন। স্থানীয় বাসিন্দাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ওই এলাকায় কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প কেন্দ্র বাস্তবায়ন থেকে সরে আসে এবং কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে সেই প্রকল্প স্থানান্তর করে। এখন মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে। এদিকে ২০১১ সাল থেকেই বসুন্ধরা গ্রুপের জমি পিডিবি দখলে নেওয়ার পর সেখানে ২০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য মোতায়েন করে। আনসার সদস্যদের বেতন-ভাতা বাবদ পিডিবি প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু আনসার সদস্যরা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না বলে পিডিবি কর্মকর্তারা মনে করছেন। কর্মকর্তারা বলছেন, ‘২০ জন আনসার সদস্য আছেন। পালাক্রমে তারা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের কথা। কিন্তু এখন মাটি চুরি হচ্ছে, গাছ চুরি হচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. শামসুদ্দীন বলেন, ‘কয়েক দিন আগে হঠাৎ শুনি, প্রকল্পের জমি থেকে একটি চক্র ড্রাম ট্রাকে করে মাটি চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। পরে জানতে পারি, চক্রটি এসব মাটি বিক্রি করছে কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের কাজে। তাই আমি টানেল প্রকল্পের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে অনুরোধ করি, যাতে পিডিবির প্রস্তাবিত বিদ্যুেকন্দ্রের জমির মাটি তারা ক্রয় না করেন। এরপর শনিবার কর্ণফুলী থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়।’ আনসারদের দায়িত্ব পালনে অবেহলার প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘২০ জন সশস্ত্র আনসার সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্বে থাকার পরও মাটি চুরি হওয়া দুঃখজনক। তবে আনসার সদস্যদেরও দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা আছে। তাদের ডিউটি শেড, সংযোগ সড়ক কিংবা বসার স্থানও দেওয়া যায়নি। উচ্চ আদালতে চলমান মামলায় নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে ওই জমিতে পিডিবি কোনো ধরনের কাজ করতে পারছে না।’ মাটি কাটার সঙ্গে কারা জড়িত এমন তথ্যের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী একটি চক্র মাটি চুরি করছে। তাদের মধ্যে একজন ঠিকাদার মো. আনোয়ার। তিনি কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পে চীনা ঠিকাদারদের কাছ থেকে কাজ নিয়ে মাটি সরবরাহ এবং অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজের ঠিকাদারি করছেন। এই আনোয়ারের গাড়ি দিয়েই মাটি চুরি হচ্ছে। অভিযোগ অস্বীকার করে ঠিকাদার মো. আনোয়ার বলেন, ‘প্রস্তাবিত বিদ্যুেকন্দ্রের জমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগ মোটেই সত্য নয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে সাগর থেকে ড্রেজারের মাধ্যমে বালি উত্তোলন করে টানেলের কাজে মাটি সবররাহ করা হচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, ‘যেখান থেকে মাটি চুরি হয়েছে বলা হচ্ছে, সেখানে গাড়ি চলাচল করেছে এমন প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না। একটি মহল অহেতুক আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, বসুন্ধরা গ্রুপ শিল্প প্রতিষ্ঠার অনেক স্বপ্ন নিয়ে যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হলে আনোয়ারাসহ চট্টগ্রামের অন্তত ৫০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হতো। এ অঞ্চলটি হতো একটি উপশহর। পরবর্তী সময়ে পিডিবি ওই জমি দখলে নিলেও কোনো উন্নয়নমূলক কাজ এখনো পর্যন্ত করতে পারেনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর