রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
খুলনায় জনসভা, খালেদা জিয়াকে ‘মাদার অব ডেমোক্র্যাসি’ উপাধি

ভোটের অধিকার আন্দোলনে বিএনপি : ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

ভোটের অধিকার আন্দোলনে বিএনপি : ফখরুল

খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে গতকাল খুলনার কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিভাগীয় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর —বাংলাদেশ প্রতিদিন

বাধা ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে গতকাল খুলনায় জনসভা করেছে বিএনপি। এতে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার গায়ের জোরে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। নির্বাচনে বিএনপিকে ভয় পায় সরকার। বিএনপি শুধু বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নয়, মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে আন্দোলন করছে। তবে গণতন্ত্রের স্বার্থে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থে অবিলম্বে খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। একই সঙ্গে মিথ্যা অভিযোগে দায়ের হওয়া বেগম জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাজা বাতিল করতে হবে।  দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে গতকাল নগরীর কেডি ঘোষ রোডে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সময় তিনি কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসনকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ হিসেবে উপাধি দিলে জনসভায় আসা নেতা-কর্মীরা হাত নেড়ে স্লোগান দিয়ে এ উপাধিতে সমর্থন জানান।  মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার, সাবেক হুইপ মশিউর রহমান, সৈয়দ মেহেদী রুমি, প্রকাশনা সম্পাদক হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব হোসেন, সহসম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল, মাসুদ অরুণ, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনা, মহানগর সাধারণ সম্পাদক ও কেসিসি মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি, ফখরুল আলম, সাবেক এমপি কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, বিএনপি নেতা মীর কায়সেদ আলী, শেখ মোশারফ হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। খুলনা বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতা-কর্মীদের ঢল নামে। এ সময় খুলনা-৩ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক ছাত্রনেতা রাকিবুল ইসলাম বকুলের সমর্থকরা সুদৃশ্য নানা ফেস্টুন ব্যানার বহন করে উপস্থিতি জানান দেয়।  মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়া কখনো অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। কারাগারে তাকে দেখতে গেলে আমাদের চোখে পানি এসে যায়। কিন্তু আমাদের মায়ের চোখে পানি আসেনি। আমাদের মা আমাদের বলেছেন, আপনারা কেউ মন খারাপ করবেন না। শক্ত হন, মনের জোর ধরেন, ঐক্যবদ্ধ হন। এই সংগ্রাম হচ্ছে আমাদের বাঁচামরার সংগ্রাম। এই সংগ্রাম চলতে থাকবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বেগম খালেদা জিয়া যদি নির্বাচনের মাঠে নামেন, তিনি যদি আবার মাঠে মাঠে চারণ কবির মতো রাজনীতি শুরু করেন। তাহলে এই স্বৈরাচারী সরকার যারা জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে তাদের এই দেশ শুধু নয়, উপমহাদেশ থেকে চলে যেতে হবে। সেই কারণে বিএনপিকে সরকারের এত ভয়।  তিনি বলেন, সরকার গত কয়েক বছরে বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হত্যা করেছে। বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে। প্রধান বিচারপতিকে বন্দুকের মুখে দেশত্যাগ করতে বাধ্য করেছে। এই সরকারের পতন ঘটাতে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।  কেন্দ্র ঘোষিত এ কর্মসূচিতে খুলনা হাদিস পার্কে জনসভার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছিল খুলনা বিএনপি। কিন্তু সেখানে আওয়ামী মহিলা লীগ পাল্টা সমাবেশের ডাক দিলে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। ফলে বিএনপি সার্কিট হাউসে জনসভা করতে চাইলেও অনুমতি মেলেনি। সর্বশেষ দলীয় কার্যালয়ের সামনে করতে চাইলেও বাধা দেওয়া হয়। বাধা উপেক্ষা করেই বিএনপি জনসভা করে।  জনসভা শুরুর আগেই মহানগর, জেলা, উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কার্যালয়ের সামনে এসে জড়ো হয়। বিএনপি নেতা-কর্মী ছাড়াও খুলনা বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও এই সভায় সমবেত হন। নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। খুলনার এই জনসভা ঘিরে সকাল থেকেই পুলিশ ছিল কড়াকড়ি অবস্থানে। খুলনা হাদিস পার্ক, পুরাতন যশোর রোড, পিকচার প্যালেস মোড় ও কেডিঘোষ রোড এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করা হয়। শুক্রবার রাত ও শনিবার সকালে আটক করা হয় ২৫ নেতা-কর্মীকে।

সর্বশেষ খবর