রবিবার, ১১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলকে পেলেও মেলেনি তথ্য

রাজপথে যৌন হয়রানি

মাহবুব মমতাজী

বেলা তখন প্রায় ২টা। ভর দুপুর। ঠিক এই সময়টিতে ট্রাফিক পুলিশের ডিউটিরতদের পালাবদল হয়। সে সময় বাংলামোটর এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন ট্রাফিক কনস্টেবল ঈসা মিয়া (৫০)। তিনি ঢাকা মহানগর ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের নিউমার্কেট জোনে কর্মরত। ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ কর্মকর্তারা ধারণা করেন— তিনিই মূলত বাংলামোটরে যৌন হয়রানি থেকে রক্ষা করেন কলেজছাত্রীটিকে। তার খোঁজে বৃহস্পতিবার দিনভর ঢাকার প্রতিটি থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ও ট্রাফিক পুলিশ বক্সে চলে নানা তৎপরতা। রাতে তার ছবি দেখে শনাক্ত করেন ফাঁড়িতে দায়িত্বরত এক মুন্সি। গতকাল সকালে তার কাছ থেকে ওইদিনের ঘটনার বর্ণনা শুনেন ট্রাফিক নিউমার্কেট জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) শাহেদুজ্জামান। কিন্তু অভিযোগ সংক্রান্ত বক্তব্য মিলেনি তার কাছ থেকে। জানতে চাইলে এসি শাহেদুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঘটনাটির তদন্ত করছে রমনা থানা পুলিশ। ভিডিও ফুটেজে ঘটনার সময়ে তার চিত্র ধরা পড়ে। সে অনুযায়ী প্রাথমিকভাবে ছাত্রীটিকে রক্ষাকারী হিসেবে তাকেই শনাক্ত করা হয়েছিল এবং তাকে নানাভাবে খুঁজে বের করা হয়। সকালে তাকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তিনি ওই সময় পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীটিকে কিংবা তাকে বাসে তুলে দেওয়ার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি ওইসব বিষয়ে কিছুই জানেন না। রাজধানীর বাংলামোটরে যৌন হয়রানির ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে রমনা থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী ওই কলেজছাত্রীর বাবা। শুক্রবার রেকর্ড করা হয় ওই ছাত্রীর জবানবন্দি। এরপর দৃষ্টি চলে যায় ওই ছাত্রীকে হয়রানির হাত থেকে রক্ষাকারী সেই ট্রাফিক কনস্টেবলের দিকে। তাকে খুঁজে বের করতে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয় ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে সংগ্রহ করা ওই ট্রাফিক কনস্টেবলের ছবি। ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মারুফ হোসেন সরদার এ প্রতিবেদককে জানান, ট্রাফিক বিভাগের যে সদস্য তাকে বাসে তুলে দিয়েছেন তাকে এখনো আমরা পাইনি। তাকে খুঁজে পেলে ঘটনার মূল বিষয়টি জানা যাবে। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভিডিও ফুটেজে মুখে মেহেদী দেওয়া লাল দাড়িওয়ালা একজন ট্রাফিক কনস্টেবলকে দেখা যাচ্ছিল। সেই অনুযায়ী ঈসা মিয়াকে শনাক্ত করা হয়। আশা করা হয়েছিল  তিনিই ঘটনার প্রকৃত বর্ণনা দিতে পারবেন। গত বুধবার ৭ মার্চে জনসভায় যোগ দিতে যাওয়া একটি মিছিলে থাকা যুবকদের দ্বারা ওই ছাত্রী শারীরিক হেনস্থার শিকার হন বলে জানা যায়। 

ঘটনার দিনই তিনি যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। সেখানে উল্লেখ করেন, ‘শান্তিনগর মোড়ে এক ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাইলাম না। হেঁটে গেলাম বাংলামোটর। বাংলামোটর যাইতেই মিছিলের হাতে পড়লাম। প্রায় ১৫-২০ জন আমাকে ঘিরে দাঁড়াইলো। ব্যস! যা হওয়ার থাকে তাই। কলেজ ড্রেস পরা একটা মেয়েকে হ্যারাস করতেসে এটা কেউ কেউ ভিডিও করার চেষ্টা করতেসে। কেউ ছবি তোলার চেষ্টা করতেসে। আমার কলেজ ড্রেসের বোতাম ছিঁড়ে গেসে। ওড়নার জায়গাটা খুলে ঝুলতেছে। ওরা আমাকে থাপড়াইছে। আমার শরীরে হাত দিসে। আমার দুইটা হাত এতগুলা হাত থেকে নিজের শরীরটাকে বাঁচাইতে পারে নাই। একটা পুলিশ অফিসার এই মলেস্টিং চক্রে ঢুকে আমাকে বের করে অ্যান্ড একটা বাস থামায়ে বাসে তুলে দেয়। বাকিটা পথ সেইফলি আসছি।’

তিন ঘণ্টায় এর শেয়ার ৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এই স্ট্যাটাসটি ফেসবুকে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

সর্বশেষ খবর