বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

অর্কিডের নাম শেখ হাসিনা

সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

অর্কিডের নাম শেখ হাসিনা

সিঙ্গাপুরে শেখ হাসিনার নামে করা হয়েছে এই অর্কিডের নামকরণ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল ইউনেস্কো বিশ্ব হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃত সিঙ্গাপুর বোটানিক গার্ডেনের ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেনে তাঁর নামের একটি অর্কিড উন্মোচন করেন। খবর বাসস 

সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সফরটি স্মরণীয় করে রাখতে অর্কিডটির নাম ‘ডেনড্রোবিয়াম শেখ হাসিনা’ রাখা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গত রবিবার সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের আমন্ত্রণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে তাঁর প্রথম সরকারি সফরে যান। সিঙ্গাপুরের জাতীয় ফুল অর্কিডের যে প্রজাতির নাম ‘ডেনড্রোবিয়াম শেখ হাসিনা’ রাখা হয়েছে, বোটানিক বাগানের কর্মকর্তারা  ‘সানপ্লাজা পার্ক’ ও ‘সেলেটার চকোলেট’ প্রজাতির সংকরায়নের মাধ্যমে সেটি উদ্ভাবন করেন। সিঙ্গাপুর জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক ড. নাইজেল টেইলর সি হর্ট সকালে এখানে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ডেনড্রোবিয়াম শেখ হাসিনা অর্কিডটি প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন। প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি, তার স্ত্রী পেপী সিদ্দিক ও তাদের দুই সন্তান এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদসহ প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। নতুন অর্কিডটির শঙ্করায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং বাগানের ব্যবস্থাপক ডেভিড লিম বলেন, ডেনড্রোবিয়াম শেখ হাসিনা অর্কিডটির শঙ্করায়ন এবং পত্র-পল্লবে বিকশিত হতে সাড়ে চার বছর সময় লেগেছে।

এই হাইব্রিড অর্কিড ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। প্রতিটি গাছেরই ১৫টি ফুলের থোকা ধরে। প্রতিটি প্রস্থে ৫ সে.মি. হয়। প্যাঁচানো প্রতিটি ফুলের গোড়া গাঢ় পিঙ্গল রঙের এবং ফুলের মাঝখানে হালকা বাদামি ও ধবধবে সাদা প্রান্ত থাকে। সিঙ্গাপুরের রীতি অনুসারে ১৯৫৭ সাল থেকে দেশটিতে সফরকারী বিভিন্ন দেশের প্রায় আড়াইশো রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের নামে স্থানীয় অর্কিডের নামকরণ করা হয়েছে বলেও ডেভিড লিম জানান। তাদের সফরকে স্মরণীয় করে রাখতেই এটা করা হয়। ‘ডেনড্রোবিয়াম শেখ হাসিনা’ অর্কিডটি এখন থেকে গার্ডেনের ভিআইপি গ্যালারির শোকেসে শোভা পাবে। প্রধানমন্ত্রী পুরো অর্কিড বাগানের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন এবং বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বাগানটিতে ১ হাজার প্রজাতি ও ২ হাজার শঙ্করায়নকৃত উদ্ভিদ রয়েছে। 

উন্নয়নে অংশীদার হতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় শরিক হতে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, নিজস্ব শিল্প পার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার তাদের ৫০০ একর বা তারও বেশি জমি বরাদ্দে প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল হোটেল সাংগ্রিলায় বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ব্যবসায়ী ফোরামের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর বাসস। ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন, বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর যৌথভাবে ‘নতুন অধ্যায়ের পথে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী লিম হং কিয়াং অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত সিইও ক্যাথি লাই এবং সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এস এস তেও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে আরও বলেন, তাঁর সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। এই সুবিধা গ্রহণ করে সেখানে শিল্প স্থাপনের জন্য সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসতে পারেন। তিনি বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে বিদেশি ব্যবসায়ীদের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের স্থান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের ব্যবসায়ীদের জন্য আইন দ্বারা বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রদান, কর অবকাশ, যন্ত্রাংশ আমদানি করে শিল্প স্থাপনে স্বল্প শুল্ক ধার্য, যে কোনো সময় লভ্যাংশসহ শতভাগ মূলধন প্রত্যাহারের সুবিধা, রেমিট্যান্স রয়্যালিটি প্রদান, তরুণ ও কর্মদক্ষ জনশক্তি এবং প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতার সুবিধার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।

চার চুক্তি স্বাক্ষর : বাংলাদেশের আইসিটি বিভাগ এবং ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব সিঙ্গাপুরের ইনস্টিটিউট অব সিস্টেম সায়েন্স (এনইউএস-আইএসএস)-এর মধ্যে ডিজিটাল লিডারশিপ, উদ্ভাবন ও ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ট্রান্সফরমেশন সংক্রান্ত দ্বিতীয় চুক্তিটি সম্পন্ন হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ ভিশন ২০২১ কার্যক্রম এবং এ সংক্রান্ত জাতীয় প্রকল্পগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির সহায়তায় বেসরকারি পরামর্শ প্রদানের লক্ষ্যে আইসিটি বিভাগের সচিব সুবির কিশোর চৌধুরী এবং এনইউএস-আইএসএস-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজ নিজ পক্ষে এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। তৃতীয় চুক্তিটি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার এবং বাংলাদেশের শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) ও সিঙ্গাপুর ম্যানুফেকচারিং ফেডারেশন (এসএমএফ)-এর মাঝে সম্পাদিত হয়। শেষ চুক্তিটি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) এবং এসএমএফ-এর মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয়। এমসিসিআই-এর সভাপতি নিহাদ কবির এবং এসএমএফ-এর পক্ষে ডগলাস ফু নিজ নিজ পক্ষে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া আগামী দিনে বাংলাদেশ ও সিঙ্গাপুরের মধ্যে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরও জোরদারের লক্ষ্যে দুই দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ব্যবসায়ী ফোরাম-২০১৮-এর উদ্বোধনের পর এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী : নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরে সরকারি সফর এক দিন সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি দেশে ফেরেন। প্রধানমন্ত্রী এবং তার সফরসঙ্গীদের নিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি নিয়মিত ফ্লাইট সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের আমন্ত্রণে চার দিনের সরকারি সফরে রবিবার সিঙ্গাপুর যান। আজ বিকালে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা ছিল। সোমবার বিকালে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের এয়ারক্রাফট বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দুর্গত পরিবারের পাশে দাঁড়াতে প্রধানমন্ত্রী সফর এক দিন সংক্ষিপ্ত করেন।

সিঙ্গাপুর সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন এবং দেশটির প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সম্মানে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীর আয়োজিত ভোজসভায় অংশ নেন। এ ছাড়া তিনি হোটেল সাংগ্রিলাতে সিঙ্গাপুর-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম এবং বিজনেস রাউন্ড টেবিলে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক বন্দর পোর্ট অব সিঙ্গাপুর পরিদর্শন করেন। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য সিঙ্গাপুর বোটানিক গার্ডেনের ন্যাশনাল অর্কিড গার্ডেন পরিদর্শন করেন এবং তার নামে সেখানে একটি অর্কিড উন্মোচন করেন তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর