বুধবার, ১৪ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
কাজলরেখার অভিযোগ

এমপি গাজীর হুমকিতে সুমন হত্যা মামলার বাদী হয়েছি

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী সুমন মিয়া হত্যা মামলার বাদী কাজলরেখা বলেছেন, রূপগঞ্জের সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী আওয়ামী লীগে তার  প্রতিপক্ষের রাজনীতিবিদদের ঘায়েল করতেই সুমন মিয়া হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেছেন। গতকাল বিকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ করেন সুমনের শাশুড়ি কাজলরেখা ও স্ত্রী ফারজানা আক্তার। কাজলরেখা বলেন, গাজী তাকে ও সুমনের বাবাকে ডেকে নিয়ে নজরবন্দি করে রাখেন। পরে সুমনের পিতা কৌশলে পালিয়ে গেলে কাজলরেখাকে বাধ্য করেন মামলা করতে। মামলা না করলে সুমনের লাশ পরিবারের কাছে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেন এমপি। মামলা দায়েরের পরও ২৬ দিন গাজীর বাড়িতে বন্দী রাখা হয় তাকে। সেখান থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও প্রাণভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে পুরো পরিবার।জানা যায়, ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার মামলার রায়কে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা প্রতিহত করতে পুলিশের পাশাপাশি রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিক ও আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাজাহান ভূইয়ার কর্মী-সমর্থকরা ও অন্য অংশের নেতা গোলাম দস্তগীর গাজীর নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে উপজেলার হাবিবনগরের ৩০০ ফুট সড়কে অবস্থান নেন। একপর্যায়ে দুই পক্ষই মুখোমুখি অবস্থান নিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। সংঘাতময় পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ সহস্রাধিক রাউন্ড টিয়ার শেল, কাঁদুনে গ্যাস, রাবার বুলেট ও গুলি ছোড়ে। এতে তারাব পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী সুমনসহ ১৫ জন গুলিবিদ্ধ ও অর্ধশতাধিক আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান সুমন মিয়া। অভিযোগ উঠেছে, এ ঘটনার পর এমপি গোলাম দস্তগীর গাজী তার অনুগত বালু হাবিব, বাবুর্চি ফিরোজ, জাহাঙ্গীর, রেহানা মেম্বার, আমল মেম্বার, শাহাবাজ ও মনির কাউন্সিলরের মাধ্যমে সুমনের বাবা মনু মিয়া ও শাশুড়ি কাজলরেখাকে গাজীর রূপসীর বাসায় ডেকে নিয়ে নজরবন্দি করে রাখেন। সেখানেই মনু মিয়াকে বাদী করে মামলার এজাহার প্রস্তুত করেন। মামলায় আলহাজ রফিকুল ইসলাম রফিকসহ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ গ্রুপের ১৭ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়। সেই অভিযোগে সুমনের পিতা মনু মিয়াকে স্বাক্ষর দিতে বললে তিনি থানায় গিয়ে পুলিশের সামনে স্বাক্ষর করবেন বলে এমপিকে জানান। রাত পৌনে ১১টার দিকে এমপির লোকেরা মনু মিয়াকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পথে মুড়াপাড়া থেকে কৌশলে পালিয়ে যান মনু মিয়া। তখন নজরবন্দি কাজলরেখাকে থানায় গিয়ে মামলা করতে বলা হয়। সুমনের পরিবারের কাউকে বাদী করতে বলেন কাজলরেখা। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বলা হয়, থানায় গিয়ে মামলা না করলে সুমনের লাশ পাওয়া যাবে নাা। মামলা ছাড়া পোস্টমর্টেমও হবে না। বেওয়ারিশ হিসেবে তার লাশ দাফন করা হবে। পরে কাজলরেখাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। থানায় যাওয়ার পর একই এজাহারে কেবল বাদীর নাম পরিবর্তন করে কাজলরেখার নাম বসিয়ে সেখানে স্বাক্ষর নেওয়া হয়।

ফারজানা আক্তার বলেন, পোশাক কারখানায় কাজ নিয়ে জর্ডানে ছিলাম, এ সময় সুমন নিহত হন। এ ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় গাজী সাহেব তার বিপক্ষ দলের লোকজনের নামে মামলা করান। মামলার পরও এক মাস আমার মা ও শিশু পুত্রকে আটক রাখেন তিনি। ৪ মার্চ আমি দেশে এলে আমার মা আমার সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এর পর থেকেই আমরা পলাতক জীবন যাপন করছি। ফোনে আমাকে, আমার ভাই রুহুল ও ভাবী সোনিয়াকে মুঠোফোনে রেহানা মেম্বার, আমল মেম্বার মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো ও গুম করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলেছেন। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতেই তারা সাংবাদিকদের দ্বারস্থ হয়েছেন বলে ফারজানা জানান।

সর্বশেষ খবর