বুধবার, ২১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
যশোরে ব্যবসায়ীদের বিন লক

বেনাপোল দিয়ে মোটর পার্টস আমদানি বন্ধ

সাইফুল ইসলাম, যশোর

যশোরের প্রায় দুই শতাধিক মোটর পার্টস ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকের বিন (বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নাম্বার) লক করে দেওয়ায় বেনাপোল বন্দর দিয়ে সব ধরনের মোটর পার্টস আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক আমদানিকারকের পণ্য ইতিমধ্যে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে চলে এসেছে। অনেকের পণ্য আবার বেনাপোল পোর্টের ওয়্যারহাউসেও আছে। কিন্তু বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর লক হওয়ার কারণে এসব পণ্য তারা ছাড় করাতে পারছেন না। এ কারণে নতুন করে কেউ এলসিও খুলছেন না। এর ফলে দুই শতাধিক আমদানিকারক যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি এর বিরূপ  প্রভাবও পড়ছে দেশের মোটর পার্টসের বাজারে। এ কারণে এ খাত থেকে কমে যাচ্ছে সরকারের রাজস্ব আয়। দেশে মোটর পার্টসের অন্যতম বড় মোকাম যশোর। এখানকার দুই শতাধিক আমদানিকারক বেনাপোল বন্দর দিয়ে মোটরসাইকেল ও  থ্রি-হুইলারের পার্টস, বাস-ট্রাকের ইঞ্জিন ও পার্টস এবং রিকন্ডিশন্ড মোটর পার্টস আমদানি করে থাকেন। এর মধ্যে সারা দেশে মোটরসাইকেল পার্টসের মোট চাহিদার পুরোটাই যশোর থেকে যায়। আর চট্টগ্রামের পর রিকন্ডিশন্ড মোটর পার্টসের সবচেয়ে বড় মোকাম যশোর। তাই যশোরের ব্যবসায়ীদের বিন লক হওয়ার কারণে এর প্রভাব সারা দেশের মোটর পার্টসের ওপর পড়ছে। মোটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতি যশোর অঞ্চলের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন সবুজ বলেন, ১৯৯১ সালের ভ্যাট আইন অনুযায়ী তাদের রিটার্ন দাখিল করার কথা। কিন্তু এত দিন দেশের কোথাও সেটি করা হয়নি। রাজধানীতে বছরখানেক হলো এটা চালু করার চেষ্টা চলছে। আমরাও এ ব্যাপারে তেমন কিছু জানতাম না। মাসখানেক আগে যশোরের আমদানিকারকরা বেনাপোলে তাদের পণ্য ছাড় করাতে গিয়ে দেখেন বিন লক। তখন ভ্যাট অফিসে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, পূর্ববর্তী বছরগুলোর রিটার্ন দাখিল করে বিন লক ছাড়িয়ে নিতে হবে। এতে দেখা যাচ্ছে, একেকজন ব্যবসায়ীকে ৫০, ৬০, কাউকে কাউকে ৮৬ লাখ টাকা পর্যন্ত গুনতে হবে। আনোয়ার হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে সমিতির পক্ষ থেকে ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অঞ্চলের কমিশনারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যার যা বকেয়া পড়েছে তার চার ভাগের এক ভাগ দিয়ে বিন লক খুলে নেওয়া যাবে। বাকি টাকা পরে দিলেও চলবে। সমিতির সভাপতি শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু বলেন, বগুড়ায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পুরনো ভ্যাট নেওয়া হচ্ছে না। ঢাকায় প্রতি বিল অব এন্ট্রিতে ১০-১৫ হাজার টাকা করে নিয়ে বিন লক খুলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ যশোরে সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। দেশের একেক স্থানের ব্যবসায়ীদের জন্য একেক রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, যশোরের পার্টস আমদানিকারকদের সবাই বেনাপোল বন্দর দিয়ে তাদের পণ্য আমদানি করেন। এ খাত থেকে সরকার বছরে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করে থাকে। যশোরের পার্টস ব্যবসার সঙ্গে প্রায় ১০ হাজার মানুষের রুটি-রুজি জড়িত। এখন এই ব্যবসায়ীদের কাছে পুরনো ভ্যাটের জন্য যে টাকা দাবি করা হয়েছে, তা যদি দিতে হয় তাহলে তারা পথে বসে যাবেন। এ খাতে সৃষ্টি হবে বিপর্যয়। তিনি বলেন, ‘আমরা পণ্য আমদানির সময় উৎসে ৪ শতাংশ ভ্যাট দিচ্ছি। প্যাকেজ ভ্যাটও দিয়েছি। এখন আরও চার শতাংশ ভ্যাট দাবি করা হচ্ছে।

যশোর শহরের আরএন রোড এলাকার মোটর পার্টস ব্যবসায়ী ও আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান কোয়ালিটি ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার কামরুল হাসান রুবেল বলেন, ভ্যাট কমিশনারেট অফিস থেকে তার প্রতিষ্ঠানের পুরনো ভ্যাট ধরা হয়েছে ৮৬ লাখ টাকা। বিন লক ছাড়ানোর জন্য এখন সাড়ে ২১ লাখ টাকা দিতে বলছে। বাকি টাকা পরে দিতে হবে। এ অবস্থায় ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এসএম মোটরসের মালিক মশিয়ার রহমান বলেন, তিনি ৫৩ পিস বাস-ট্রাকের ইঞ্জিন আমদানি করেছেন, যা এখন বেনাপোল বন্দরের খোলা ওয়্যারহাউসে পড়ে আছে। বিন লক থাকায় তিনি এগুলো ছাড়াতে পারছেন না। প্রায় ২১ লাখ টাকার এসব পণ্য ছাড় করালে সরকার ১৫-১৬ লাখ টাকা রাজস্ব পেত। কিন্তু সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অঞ্চলের কমিশনার মো. শওকাত হোসেন বলেন, ‘ভ্যাটের টাকা তো ব্যবসায়ীদের দিতেই হবে। যার যা বাকি পড়েছে, আপাতত কিছু দিয়ে বিন লক খুলে নেওয়া যাবে। কিন্তু বাকিটা পর্যায়ক্রমে দিতেই হবে। যশোরে মোট ১ হাজার ৬০০ ব্যবসায়ীর বিন লক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৩৩ জন ব্যবসায়ী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বকেয়ার কিছু অংশ পরিশোধ করে তাদের বিন লক খুলে নিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধের ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের জানানো হয়নি কথাটি সত্য নয়। হয়তো প্রত্যেককে আলাদাভাবে বলা হয়নি, কিন্তু মোটর পার্টস ব্যবসায়ীদের সমিতিতে গিয়ে বিষয়টি তাদের জানানো হয়েছে।’ তবে শওকাত হোসেন বলেন, ‘এবারের বাজেট প্রস্তাবে তিনি এ বিষয়টি উল্লেখ করবেন। সরকার এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই বাস্তবায়ন করা হবে। সরকার যদি পুরোটাই নিতে বলে পুরোটাই নিতে হবে। যদি কিছুটা বা পুরোটা মওকুফ করে, সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর