উন্নয়নশীলের কাতারে আসা বাংলাদেশকে আগামী দিনগুলোয় কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেছেন, ‘স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সামনে সময় এখন ছয় বছর। এই সময়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হবে। রপ্তানিতে ঝুঁকি এড়াতে পণ্য বহুমুখীকরণ করতে হবে। বাড়াতে হবে গবেষণা কার্যক্রম।’ জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাউন্সিল ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সরকারকে আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে জানিয়েছে, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরণের তিনটি পূর্বশর্ত পূরণ করেছে। তাই ২০১৮ সালে বাংলাদেশের এই উত্তরণপর্ব শুরু হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের সামনের দিনগুলোর চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আগামী দিনগুলোয় আমাদের ব্যাপক দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। কারণ, এলডিসি থেকে বেরিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশের অনেক সুযোগ চলে যাবে। আবার অনেক নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার এই অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। এজন্য কঠোর মনিটরিং বাড়াতে হবে।’ এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও তাইওয়ানের মতো দেশগুলো তাদের সরকারপ্রধানের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড মনিটরিং করেছে। আমরাও পারব। বাঙালি পারে। এই মনিটরিং করতে ব্যর্থ হলে আবার খেসারত দিতে হবে।’ বাংলাদেশি পণ্যের মেধাস্বত্ব উন্নয়ন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো জ্ঞানভিত্তিক অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ার দিকে এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে। ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ সরকারকে পরামর্শ দিয়ে আরও বলেন, দেশে এখন রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ না বাড়লে, বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়বে না। তার মতে, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল হওয়ার ভিতরে ব্যাপক অর্থনৈতিক সম্ভাবনা রয়েছে। আর এলডিসি ক্যাটাগরি থেকে চূড়ান্তভাবে যখন বেরিয়ে যাবে, তখন বেশকিছু বাণিজ্যিক চ্যালেঞ্জ সামনে আসবে। এসব মোকাবিলায় আগামীতে অর্থনৈতিক কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন। এখন বিশ্ববাজারে যেসব সুবিধা বাংলাদেশ পায়, তা ধরে রাখতে অর্থনৈতিক শক্তি আরও বাড়ানো দরকার। অবকাঠামো উন্নয়নও বড় চ্যালেঞ্জ।
অর্থনীতি সমিতির এই সাধারণ সম্পাদকের মতে, বর্তমানে এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়াসহ এশিয়া-আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বিনা শুল্কে রপ্তানি সুবিধা পাচ্ছে। বাংলাদেশের ৩৪ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের ২৭ বিলিয়নই আসে এসব দেশ থেকে। এ ছাড়া, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে কম সুদে বা বিনা সুদে ঋণসহায়তা পাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে এসব সুবিধার বিকল্প কী পথ আছে, তা এখনই খুঁজে বের করতে হবে।