বৃহস্পতিবার, ২৯ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দখলে রুগ্ন ডাকাতিয়া হারিয়ে যাচ্ছে কালাডুমুর

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

দখলে রুগ্ন ডাকাতিয়া হারিয়ে যাচ্ছে কালাডুমুর

পানিশূন্য কুমিল্লার কালাডুমুর নদ

দখলে রুগ্ন হয়ে যাচ্ছে দক্ষিণ কুমিল্লার প্রাণ নতুন ডাকাতিয়া নদী। এ নদীতে একসময় পালতোলা নৌকা চলত। ছিল লঞ্চ ও ট্রলারের রুট। শুষ্ক মৌসুমেও কৃষক পর্যাপ্ত পানি পেত। দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় নদীর পেট পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। তাই অল্প বৃষ্টিতেই ভেসে যায় দুই কূল। সেচের সময় নদী হয়ে ওঠে ধু-ধু বালুচর। এদিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কালাডুমুর আরেকটি ছোট নদী। সেটির তলদেশ পলিতে ভরাট হয়ে গেছে। সেটি খনন হলে ভাগ্য বদলাবে ওই এলাকার হাজারো কৃষকের।

নতুন ডাকাতিয়া নদী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লার সদর দক্ষিণ, লালমাই, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয় নতুন ডাকাতিয়া নদী। এ  নদীর কারণে দক্ষিণ কুমিল্লার কৃষিতে একসময় সমৃদ্ধি আসে। এ নদীতে শুকনো মৌসুমে এখন পানি থাকে না বললেই চলে। বাগমারা বাজার, দৌলতগঞ্জ বাজার ও মনোহরগঞ্জ বাজারসহ কয়েকটি স্থানে ডাকাতিয়া নদীতে চলছে দখলের প্রতিযোগিতা। ১৩০ ফুট চওড়া নদী কোথাও ৬০ ফুটে পরিণত হয়েছে। দৌলতগঞ্জ বাজারের রাজঘাট, গোলবাজার, সামনীর পুল, পশ্চিমগাঁও, সিংজোড়, হামিরাবাগ, কালিয়াপুর এবং মনোহরগঞ্জ বাজার, আমতলী, চিতোশীসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতিয়ার দুই তীরে দখলদাররা অবৈধভাবে মার্কেট ও স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এতে নদীর অস্তিত্ব পড়েছে হুমকির মুখে। স্থানীয়রা নদীটি দখল মুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কালাডুমুরের উৎসমুখ গৌরীপুর। গৌরীপুর থেকে ইলিয়টগঞ্জ ব্রিজ পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার এলাকা খনন হলে হাসি ফুটবে সহস্রাধিক কৃষকের মুখে। এ নদীর পানিতে একসময় চাষ হতো ৫০ হাজার বিঘা জমি। নদীটির দুই পাড়ের গৌরীপুর, ঝিংলাতলী, রায়পুর, বানিয়াপাড়া, চান্দ্রা, আদমপুর, বিটমান, টামটা, সিংগুলা, বিটতলা ও নয়াকান্দিসহ কয়েকটি গ্রামের চাষিরা এ নদীটির পানির ওপর নির্ভরশীল। বোরো মৌসুমে নদীটি থেকে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া গেলে উৎপন্ন হতো ১০ লাখ মণ ধান। এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা মতিন সৈকত জানান, দীর্ঘদিন নদীটি খনন না হওয়ায় পলি জমে পানিশূন্য হয়ে গেছে। নদীটি খনন হলে এ এলাকায় প্রতি বোরো মৌসুমে ঘরে ঘরে ধান তোলার উৎসব লেগে থাকত। লাকসামের প্রবীণ সাংবাদিক আবদুল জলিল বলেন, ডাকাতিয়া নদীকে কেন্দ্র করে লাকসামের দৌলতগঞ্জ বাজার বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। প্রভাবশালীরা নদীটি দখল করে নিচ্ছে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। মনোহরগঞ্জের সাংবাদিক আবদুর রহমান জানান, বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীনরা নদী দখল আর দূষণে নেতৃত্ব দিয়েছে। ডাকাতিয়া নদী একসময় দক্ষিণ কুমিল্লার আশীর্বাদ ছিল। এখন তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লাকসাম উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল হক বলেন, নদী দখলকারীদের তালিকা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এগিয়ে এলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া পৌরসভার বর্জ্য নদীতে না ফেলার জন্য পৌর কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ বি এম খান মোজাহেদী বলেন, ‘নতুন ডাকাতিয়া নদীর লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ অংশে দখলের কিছু অভিযোগ পেয়েছি। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ডাকাতিয়া নদী খননের জন্য একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। চলতি বছর কাজ শুরু করতে পারব আশা করি। কালাডুমুর খননের বিষয়েও কাজ করা হবে।’

সর্বশেষ খবর