অবৈধভাবে গড়ে তোলা ভবন ভাঙার বিষয়ে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর দেওয়া মুচলেকায় ভুল থাকায় তা সংশোধন করে আগামী সোমবার আবার দাখিল করতে বলেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ভবন ভাঙতে বিজিএমইএ সময় পাবে কিনা, সে বিষয়ে ওইদিনই আদেশ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আদালত। গতকাল প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আদেশের জন্য নতুন এই দিন ঠিক করে দেয়। বিজিএমইএর ভবন ভাঙার জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে (রাজউক) প্রস্তুত থাকতেও বলেছে আদালত। আদালতে বিজিএমইএর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম এবং রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এ মামলায় হাই কোর্টের অ্যামিকাস কিউরি মনজিল মোরসেদও উপস্থিত ছিলেন। এর আগে মঙ্গলবার আদালত বলেছিল, ভবন ভাঙার জন্য বিজিএমইএর করা এক বছরের সময়ের আবেদন আপিল বিভাগ বিবেচনা করবে, কিন্তু তার আগে তাদের এই মর্মে মুচলেকা দিতে হবে যে, তারা ভবিষ্যতে আর সময় চাইবে না। সে অনুযায়ী বিজিএমইএ পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে একটি মুচলেকা গতকাল আদালতে দাখিল করা হয়। পরে মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুচলেকায় বলা হয়েছিল বোর্ড অব ডিরেক্টরস আর সময় চাইবে না। তারা যদি চায়, তাহলে তারা দায়ী হবে। তখন কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, বিজিএমইএর বোর্ড অব ডিরেক্টরস তো ছয় মাস বা এক বছর পর নাও থাকতে পারে। আরেকটা বিষয় হলো, মুচলেকায় বলা হয়েছে নির্ধারিত সময়ের পর তারা ভবন ছেড়ে দেবে। কিন্তু আদালতের নির্দেশনা ছিল ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভাঙতে হবে। সে বিষয়েও ব্যাখ্যা নেই। আদালত এসব নিয়ে প্রশ্ন তুললে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে নতুন করে মুচলেকা দেওয়ার কথা বলেন তাদের আইনজীবী।’
মনজিল মোরসেদ বলেন, ওই মুচলেকায় বলা থাকবে বিজিএমইএ আর সময় চাইবে না। সময় শেষ হওয়ার পর আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিএমইএ নিজেরাই ভবন ভাঙবে। আদেশ না মানলে বিজিএমইএ দায়ী থাকবে। তিনি বলেন, হাই কোর্টের আদেশ অনুযায়ী ভবন ভাঙতে যদি কর্তৃপক্ষ (বিজিএমইএ) উদ্যোগ নিতে না পারে তাহলে রাজউককে প্রস্তুত থাকার জন্য বলেছে আদালত। জলাধার আইন ভেঙে নির্মিত বিজিএমইএ ভবনকে সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পের ক্যান্সার বলেছিল হাই কোর্ট। ওই ভবন অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায় আপিলেও বহাল থাকে। পরে বিজিএমইএ রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করলেও তা খারিজ হয়ে যায়। রায়ের পর কার্যালয় সরিয়ে নিতে বিজিএমইএ তিন বছর সময় চাইলেও আপিল বিভাগ তাদের ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলে। সেই ছয় মাস সময় শেষ হওয়ার আগে আরও এক বছর সময় চেয়ে গত বছর ২৩ আগস্ট আবেদন করে বিজিএমইএ। আপিল বিভাগ তখন ভবনটি ভাঙতে আরও সাত মাস সময় দেয়, যা আগামী ১২ এপ্রিল শেষ হবে। ওই আদেশে আদালত বলে, এটাই শেষ সুযোগ, আর সময় দেওয়া হবে না। কিন্তু ৫ মার্চ বিজিএমইএ ভবনটি ভাঙতে আবারও এক বছর সময় চেয়ে আবেদন করে, যার ওপর রবিবার শুনানি শেষে গতকাল আদেশের জন্য রাখা হয়েছিল।