প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত সমৃদ্ধ অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় এতদঞ্চলের সব ধরনের সন্ত্রাস সমূলে নির্মূল করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রাতে গণভবনে বিমসটেক (বিআইএমএসটিইসি) রাষ্ট্রগুলোর ন্যাশনাল সিকিউরিটি চিফদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। খবর : বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটি নিরাপদ ও সমৃদ্ধ অঞ্চল গড়ে তুলতে আমাদের সব ধরনের সন্ত্রাস সমূলে উৎপাটন করতে হবে। বৈঠকের পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী এ সময় আশাবাদ ব্যক্ত করেন— বিমসটেকভুক্ত দেশগুলো এ অঞ্চলের সন্ত্রাস উচ্ছেদে পারস্পরিক সহযোগিতাকে আরও জোরদার করবে। তিনি বলেন, মাদকাসক্তি, মানব পাচার, সাইবার অপরাধ, সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত হুমকি এবং জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এ অঞ্চলের সব দেশের জন্য একই ধরনের চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পদ্ধতি আমাদের উদ্ভাবন করে সমন্বিতভাবে এর সমাধানে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ প্রশ্নে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরোল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমরা সন্ত্রাস এবং উগ্র চরমপন্থার বিরুদ্ধে তরুণ সম্প্রদায়, পরিবার-পরিজন এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে ব্যাপক জনসচেতনতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশের ভূখণ্ডকে কোনোভাবেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য কাউকে ব্যবহার করতে না দেওয়ায় তাঁর সরকারের দৃঢ় অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেন।
প্রেস সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিমসটেক সদস্য দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানদের মাধ্যমে তাদের দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানকে তাঁর শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক বিমসটেক সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জাতীয় নিরাপত্তা প্রধানদের দ্বিতীয় বৈঠকের বিভিন্ন দিক প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। বিমসটেক মহাসচিব শহিদুল ইসলাম, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোবাল, তারিক আহমেদ সিদ্দিক, মিয়ানমারের থাং তুন, নেপালের রাষ্ট্রদূত চপ লাল ভুসাল, শ্রীলঙ্কার বিগ্রেডিয়ার এইচকেএসিআর কোদি ফুয়াক্কুল ও থাইল্যান্ডের চালিদা চোচাই বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।প্রধানমন্ত্রী ‘মেডেল অব ডিসটিংকশন’ সম্মানে ভূষিত : লায়ন্স ক্লাবস ইন্টারন্যাশনাল দরিদ্র, অসহায়, বিশেষ করে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সেবায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মেডেল অব ডিসটিংকশনে’ ভূষিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের বলেন, এখানে সকালে সফররত লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট ড. নরেশ আগরওয়াল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই মেডেলে ভূষিত করেন। লায়ন্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনালের প্রেসিডেন্ট মানবিক গুণাবলী বিশেষ করে মিলিয়ন রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি শেখ হাসিনাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আপনার এই গুণের জন্য এরই মধ্যে আপনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।
মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি পুনরায় আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মানবতার দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ অবশ্যই রাখতে হবে। এই সংকট নিরসনে বাংলাদেশ বিশেষ করে মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন প্রতিবেশী পাঁচটি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলেছে। গতকাল সকালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু-এসইএআরও) আঞ্চলিক প্রধান তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম পরে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।