শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

চুয়াডাঙ্গায় জাহাজ চলার নদীতে চাষাবাদ

জামান আখতার, চুয়াডাঙ্গা

চুয়াডাঙ্গায় জাহাজ চলার নদীতে চাষাবাদ

ভৈরবের বুকে চলছে চাষাবাদ

মানচিত্র থেকে একে একে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে চুয়াডাঙ্গার পাঁচ নদ-নদী। এগুলোর কোনোটা উৎসমুখে পলি পড়ে স্বাভাবিক স্রোতোধারা হারিয়েছে, আবার কোনোটা দখলদারদের কবলে পড়ে বিলীন হওয়ার পথে। একসময় এসব নদ-নদীর ভরা যৌবন থাকলেও কালের পরিক্রমায় তা ইতিহাসে পরিণত হয়েছে। জেলার প্রধান নদ-নদী ভৈরব ও মাথাভাঙ্গায় একসময় জাহাজ চলত। কলকাতার সঙ্গে এ অঞ্চলের বাণিজ্য যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ছিল নদ-নদী দুটি। অন্যদিকে কুমার নদ এবং নবগঙ্গা ও চিত্রা নদীও জেলার কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে দীর্ঘ সময়। কিন্তু এগুলোও আজ বিলীন হওয়ার পথে। চুয়াডাঙ্গা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে ভৈরব ও কুমার নদ এবং মাথাভাঙ্গা, নবগঙ্গা ও চিত্রা নদী বয়ে গিয়েছে। কিন্তু এসব নদ-নদী এখন যৌবন হারিয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত। মাথাভাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা জেলায় বর্তমানে নিজস্ব স্রোতোধারা নিয়ে কোনোরকমে বেঁচে আছে মাথাভাঙ্গা নদী। এ নদীর মোট দৈর্ঘ্য ১৩৫ কিলোমিটার, যার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা অংশে রয়েছে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। ভারতের পদ্মা নদী থেকে বয়ে আসা এ নদী কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, ভেড়ামারা; মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা হয়ে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় প্রবেশ করেছে। নদীটি দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা দিয়ে ভারতে ফিরে সেখানকার চূর্ণি নদীতে পড়েছে। একসময় এ নদীতে বড় বড় নৌযান চলাচল করলেও বর্তমানে এর বেহাল দশা জেলাবাসীর দীর্ঘশ্বাসে পরিণত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে কলকাতা থেকে এ নদীপথেই বড় বড় নৌযানে মালামাল আনা-নেওয়া করা হতো। বর্তমানে নদীটির উৎসমূল পলি পড়ে বন্ধ হওয়ায় মূল স্রোতোধারা নেই বললেই চলে। নদীটির বুকে থাকা অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝরনাধারাই নদীটিকে কোনোরকমে বাঁচিয়ে রেখেছে। ভৈরব : চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা ও জীবননগর অংশে অবস্থান ভৈরবের। এ নদের মোট দৈর্ঘ্য ৯৬ কিলোমিটার, যার মধ্যে চুয়াডাঙ্গা অংশে রয়েছে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার। ভারতের জলঙ্গী নদী থেকে বয়ে আসা এ নদ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা হয়ে দামুড়হুদা উপজেলার সুবলপুরে এসে মাথাভাঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছে। এর একাংশ জীবননগর উপজেলা পর্যন্ত প্রবাহিত হয়েছে। ব্রিটিশ শাসনামলে এ নদটিও ছিল কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম। বড় বড় নৌযান চলত এ নদেও। বর্তমানে নদটি পলি পড়ে ভরাট হওয়া ও দখলদারদের দখলে সরু নালা হয়ে অস্তিত্ব বিলীনের জানান দিচ্ছে। কেবল বর্ষাকালে এ নদে পানির ধারা থাকলেও বছরের অন্য সময় এর বুকে চলে দখলদারদের চাষাবাদ। সম্প্রতি এ নদের মেহেরপুর অংশে খননের কাজ হয়েছে। নদটিকে বাঁচানোর জন্য চুয়াডাঙ্গা অংশেও খনন করা গেলে এটি জীবন ফিরে পাবে বলে অনেকেই মনে করেন। কুমার : চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় কুমার নদের অবস্থান। এ নদের মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা অংশে প্রায় ২৮ কিলোমিটার রয়েছে। চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপন্ন এ নদ ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড, ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা হয়ে মাগুরা জেলা সদরে নবগঙ্গা নদীতে পতিত হয়েছে। এ নদটিও অস্তিত্ব হারানোর পথে। বছরের অর্ধেক সময় এ নদে পানিপ্রবাহ থাকে না। নদটি বর্তমানে গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্পের আওতাভুক্ত। পলি পড়ে দিন দিন স্বাভাবিক নাব্যতা হারাচ্ছে কুমার। নবগঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় নবগঙ্গা নদীর অবস্থান। নদীটি মাথাভাঙ্গার শাখানদী। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। পলি পড়ে এর তলদেশ মাথাভাঙ্গা নদী থেকে ওপরে উঠে আসায় নবগঙ্গা প্রায় সারা বছরই পানিশূন্য থাকে। বর্ষাকালে মাথাভাঙ্গা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে এ নদীতে কিছুটা পানিপ্রবাহ দেখা যায়। চিত্রা : ইতিমধ্যে বিলীনপ্রায় নদী হিসেবে চিহ্নিত চিত্রা। জেলার সদর উপজেলার একাংশে চিত্রা নদীর স্মৃতিচিহ্ন মনে করিয়ে দেয় ‘এইখানে এক নদী ছিল’। অস্তিত্ব হারানোয় চিত্রা নদী সম্পর্কে কোনো তথ্যই নেই চুয়াডাঙ্গার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে।

সর্বশেষ খবর