শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ

মহিউদ্দিন মোল্লা, হাতিয়া থেকে ফিরে

অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ

পর্যটন আর অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় স্থান নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। এই হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ একটি নান্দনিক স্থান। যোগাযোগব্যবস্থা সহজলভ্য আর উন্নত হলে এখানে দেশ-বিদেশের পর্যটক হুমড়ি খেয়ে পড়বে। বদলে যাবে হাতিয়া ও নিঝুমদ্বীপের চেহারা। নিঝুমদ্বীপের সমুদ্রসৈকত হতে পারে দ্বিতীয় কক্সবাজার।

সরেজমিন জানা গেছে, বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন একটি উপকূলীয় দ্বীপ হাতিয়া। চারদিকে অথৈ জলের রাশি আর উত্তাল তরঙ্গের মাঝে যেন ভাসমান ভেলা। ২ হাজার ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়ানো নয়নাভিরাম এ দ্বীপের জনসংখ্যা প্রায় ৬ লাখ। হাতিয়ার উত্তরে সুবর্ণচর উপজেলা ও উত্তর-পশ্চিমে রামগতি উপজেলা, দক্ষিণে ও পুবে বঙ্গোপসাগর এবং পশ্চিমে ভোলার মনপুরা উপজেলা। হাতিয়ায় ১১টি ইউনিয়ন। আনুমানিক পঞ্চদশ শতাব্দীর দিকে বঙ্গোপসাগর আর মেঘনার মোহনায় গড়ে ওঠা সবুজে ঘেরা দ্বীপটি মানুষের নজরে আসে। বর্তমানে স্থানীয়দের মতে, এখানে রাজনৈতিক চাঁদাবাজির কারণে ট্রলার, স্পিডবোট, মোটরসাইকেল ও বেবিট্যাক্সির ভাড়া বেড়েছে;  যা পর্যটনের অগ্রগতিতে বাধার সৃষ্টি করছে। নিঝুমদ্বীপ হাতিয়ার অলঙ্কার। নিঝুমদ্বীপসহ জেগে ওঠা চরাঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠতে পারে সম্ভাবনার আরেক নতুন বাংলাদেশ। হাতিয়ার নৌঘাটগুলোয় পন্টুন নেই। অথচ পন্টুনের নামে চাঁদা আদায় হচ্ছে। হাতিয়ার অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাটের দশা এখন বেহাল। নৌপথে নিঝুমদ্বীপ, ঢালচর, মৌলভীর চর, রামগতি, নলেরচর যাতায়াতের মাধ্যম ফিটনেসবিহীন নৌকা ও ট্রলার। হাতিয়ার উপকূল দেশের অন্যতম মত্স্যচারণ ক্ষেত্র। হাতিয়ার উপকূলীয় এলাকায় ট্রলারগুলো যে পরিমাণ মাছ ধরে তা গোটা দেশের আহরিত মাছের ১৭ ভাগ। মাছ ধরা ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন করা গেলে দেশের চাহিদা পূরণের পরও ৩০ লাখ মেট্রিক টন মাছ রপ্তানি করা সম্ভব হতো। হাতিয়ার মাটি অত্যন্ত উর্বর। এ দ্বীপে বার্ষিক খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন। খাদ্যশস্যের চাহিদা ৫৮ হাজার মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ৪০ হাজার মেট্রিক টন। নিঝুমদ্বীপের দুই-তৃতীয়াংশ জুড়ে রয়েছে বন বিভাগের তৈরি বাগান। সেখানে সুন্দরী, কেওড়া, গেওয়া, গোলপাতা, কেশরী ইত্যাদি বৃক্ষ জন্মে। অপরূপ নৈসর্গিক শোভামণ্ডিত দ্বীপ নিঝুমদ্বীপ। এ দ্বীপের লোকসংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার হলেও চিত্রল হরিণের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। নিঝুমদ্বীপ বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ, যে দ্বীপে মানুষের চেয়ে হরিণ বেশি। দ্বীপের বনে, ফসলের মাঠে, রাস্তাঘাটের পাশাপাশি লোকালয়েও ঝাঁক বেঁধে ঘুরে বেড়ায় হরিণের পাল। নিঝুমদ্বীপে রয়েছে প্রায় ৩৫ প্রজাতির পাখি। এ ছাড়া শীতের মৌসুমে অজস্র প্রজাতির অতিথি পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এ দ্বীপ। নিঝুমদ্বীপে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে পলিমাটির চর; যা জোয়ারের পানিতে ডোবে এবং ভাটায় শুকিয়ে যায়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশের জন্য নিঝুমদ্বীপ বিখ্যাত। এ ছাড়া শীত কিংবা শীত-পরবর্তী মৌসুমে নিঝুমদ্বীপ চেউয়া মাছের জন্য বিখ্যাত। জেলেরা এ মাছ ধরে শুঁটকি তৈরি করেন। কয়েকভাবে নিঝুমদ্বীপে যাওয়া যায়। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে হাতিয়া। হাতিয়া থেকে বোট বা ট্রলারে নিঝুম দ্বীপ। এ ছাড়া বাসে নোয়াখালীর সোনাপুর যেতে হয়। সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশায় চেয়ারম্যানঘাটে। এ ঘাট থেকে নৌকা, স্পিডবোট বা ট্রলারে হাতিয়া হয়ে অথবা সরাসরি যাওয়া যায় নিঝুমদ্বীপে। এ ছাড়া হাতিয়া সদর থেকে মোটরসাইকেলে যাওয়া যায় মুক্তারিয়া ঘাট। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় যাওয়া যায় নিঝুমদ্বীপ ঘাট। এরপর আবারও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে যাওয়া যায় নামার বাজারে (নিঝুমদ্বীপ)। ভ্রমণের জন্য হাতিয়া সদরের ওছখালীতে থাকার উন্নতমানের রেস্ট হাউস রয়েছে। এ দ্বীপ সম্পর্কে হাতিয়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘হাতিয়া ও নিঝুমদ্বীপ একটি সমৃদ্ধ অঞ্চল। যাতায়াতব্যবস্থা উন্নত হলে এ জনপদ বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।’ শিক্ষাবিদ এনামুল হক বলেন, ‘অনেক সমাজসেবী আর গুণীর অবদানে হাতিয়া অগ্রগতির পথে হাঁটছে। তবে নদীভাঙন রোধ এবং সড়ক যোগাযোগ উন্নত করা জরুরি হয়ে উঠেছে।’ হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার রেজাউল করিম বলেন, ‘ওছখালী-জাহাজমারা সড়ক সংস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্ষার আগেই কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা করছি।’ পরিবহনে বেশি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ পরিবহনগুলো অবৈধ, তবে জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে সেগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না।’

সর্বশেষ খবর