শুক্রবার, ৩০ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

দেশেই হচ্ছে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট

মাহবুব মমতাজী

হার্ট ভাল্ব ও পেসমেকারের দাম সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নামমাত্র মূল্যে দেশেই হচ্ছে কিডনি প্রতিস্থাপন। নিউমোনিয়া চিকিৎসায় বাংলাদেশি চিকিৎসকদের এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। মাত্র ৫ থেকে ৬ লাখ টাকায় ব্লাড ক্যান্সার রোগীরা এখন দেশেই ‘বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট’ করতে পারছেন। বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় ৬ থেকে ১০ গুণ আর দেশে সফলতার হার শতভাগ হওয়ায় চিকিৎসা নিতে স্বস্তি বোধ করছেন ভুক্তভোগীরা। তবে অর্থের অভাবে এখনো থ্যালাসেমিয়া ও লিউকেমিয়ায় আক্রান্তদের অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন সম্ভব হয়নি। ভবিষ্যতে এসব রোগীর চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি ব্যয় কমাতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। তিন বছর আগে ঢামেকে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন সেলিম নামে এক রোগী। পার্শ্ববর্তী চারটি দেশের ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন খরচ ৩০ থেকে ৫০ লাখ টাকা জেনে দেশেই ট্রান্সপ্ল্যান্টেশনের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কম খরচে দেশেই জটিল এই চিকিৎসা করতে পেরে খুশি দীর্ঘদিন পর ফলোআপে আসা এই সেলিম। সামর্থ্যের অভাবে অনেকেই মনে জোর না পেয়েও বাধ্য হয়ে চিকিৎসা নিয়েছিলেন ঢামেক হাসপাতালে। পরে তাদের সুস্থতা ও সফলতার হার দেখে ভুক্তভোগীদের আস্থা বেড়েছে দেশীয় চিকিৎসায়। এছাড়াও বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে আসা এক রোগী জানান, চিকিৎসকরা বলছেন, আমাকে ৫ লাখ টাকার মধ্যে এই চিকিৎসা করা যাবে। আরেক রোগী জানান, তিনি ভারতে চেন্নাই গিয়েছিলেন চিকিৎসা নিতে। কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি। আর এখানে বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করে এখন ভালো আছেন। কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার ছাড়াই ৩ সপ্তাহের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রোগীর বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করা হয়। পূর্বে সংগৃহীত স্ট্যাম্প সেল পুনরায় রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো হয়। যা ব্লাডে রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে। সম্পূর্ণ অত্যাধুনিক ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন ইউনিটে প্রতি মাসে একটি করে ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পন্ন করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, দুজন রোগীর দুটো রোগ মাল্টিমল মাইলোমা ও লিমপো মাইলোমা নিয়ে তারা চিকিৎসা শুরু করেন। আর যখন দুজনে প্রথমবার কেমোথেরাপি মিস করে অথবা এই রোগটা যদি পুনরায় আবার ফিরে আসে তখন তাদের ট্রান্সপ্ল্যান্ট করার সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। আর এই চিকিৎসার সব উপকরণ বাহির থেকে আনতে হয়। তাদের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ওই চিকিৎসা সম্পর্কে অবহিত করা হয়।

 জানা যায়, বর্তমানে দেশে ২৪ থেকে ২৫ হাজার মানুষের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন প্রয়োজন। ঢামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. বিদ্যুৎ কান্তি পাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, চিকিৎসাটি মোটামুটিভাবে ভালোই চলছে। এক্ষেত্রে ব্যবহূত ইনজেকশনগুলো অনেক ব্যয়বহুল। দুটি ইনজেকশনের প্রয়োজন হলে একটি হাসপাতাল থেকে, আর অন্যটি রোগীর পক্ষ থেকে সরবরাহের কথা বলা হয়। এই রোগের চিকিৎসা করতে এখন পর্যন্ত কোনো রোগী মারা যায়নি। এখন পর্যন্ত আমাদের সফলতা শতভাগ। হাসপাতাল সূত্র জানায়, ২০১৪ সাল থেকে শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত ৩৫টি বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি রোগীর ট্রান্সপ্ল্যান্ট ব্যয় ৫ লাখের সঙ্গে সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক টাকার ওষুধপত্র। তবে নতুন বছরের শুরুতে ডিএমসিতে অ্যালোজেনিক বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্ভাবনার কথাও জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সর্বশেষ খবর