শিরোনাম
শনিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

হবিগঞ্জের ২৫ নদী বিলীনের পথে

চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ

একসময় স্টিমার লঞ্চের পাশাপাশি চলত সারি সারি পালতোলা নৌকা। স্টিমারের ভেঁপুর শব্দ আর মানুষের পদচারণায় দিনরাত মুখরিত ছিল হবিগঞ্জ জেলার পূর্ব-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে বয়ে চলা কালনী-কুশিয়ারা ভেড়ামোহনা নদী। যার উৎপত্তিস্থল ভারতের বরাক নদীর মোহনা থেকে। নৌ-বন্দর শেরপুর-আজমিরীগঞ্জ পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল জমজমাট। নাব্যতা সংকটের কারণে সেই প্রমত্তা কালনী-কুশিয়ারা যা আজমিরীগঞ্জের অংশে ভেড়ামোহনা নদীর তীরে পূর্বের সেই জৌলুস নেই। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ভারতের টিপাই মুখ অংশে বাঁধ দেওয়ার কারণে পানি প্রবাহ কমে গেছে। হবিগঞ্জ জেলায় প্রায় ২৫টি ছোট-বড় নদী ছিল। তার মধ্যে কালনী-কুশিয়ারা (ভেড়ামোহনা), মরা কুশিয়ারা, মরা বিবিয়ানা, হাওয়াই, সুটকী, ঝিংড়ী, ঘরদাইর, রত্না, শাখা বরাক, করাঙ্গী, বিজনা, সুতাং, সোনাই, বছিড়া, হাঙ্গরভাঙা প্রভৃতি নদীসহ ২৫টি নদী বিলীনের পথে। বর্তমানে নদীগুলোয় পানি প্রবাহ কমে যাওয়ায় সরু খালে পরিণত হয়েছে। শেরপুর, আজমিরীগঞ্জ কাকাইলছেও, সৌলরীঘাটসহ অর্ধশতাধিক আন্তঃজেলা ও অভ্যন্তরীণ নৌ-রোড বন্ধ হয়ে গেছে। নদীতে নৌ-চলাচলের জন্য পানি কম ও ৫০টি পয়েন্ট বন্ধ হওয়ায় হাওর অঞ্চলের মানুষ প্রতিদিন হেঁটেই চলাচল করছে। নদী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নদ-নদীগুলো ড্রেজিং না করা এবং বিভিন্ন স্থানে এসব নদীর দুই পাড় দখল করে অবকাঠামো নির্মাণ, নদীগুলো থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করায় হবিগঞ্জের ৮টি উপজেলার নদ-নদীগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। এ ছাড়া সমগ্র হাওর অঞ্চল মরুভূমির রূপ ধারণ করতে চলেছে। তবে আশার কথা শুনালেন হবিগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ তাওহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, গোপলা, বিজনা, রত্না, করাঙ্গী, কাস্তি, সোনাই, সুতাংসহ পাঁচটি নদীর মোট ২১০ কিলোমিটার নদী খননের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে বাদ পড়েছে আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই উপজেলার হাওর অঞ্চলের ২০টি নদী। ওয়াটার কিপার ও পরিবেশ আন্দোলন কর্মী তোফাজ্জল সোহেল জানান, খোয়াই, কালনী, কুশিয়ারা (ভেড়ামোহনা) নদী অবলম্বন করে যেসব পরিবার মাঝিমাল্লা, জেলে, চাষি জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল, তারা এখন কর্মহীন হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে।

হবিগঞ্জের অন্যতম খোয়াই নদী ভারতের ত্রিপুরা পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে আগরতলা ও খোয়াই শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে চুনারুঘাট উপজেলার ওপর দিয়ে লাখাই উপজেলার ‘মাদনা’র উজানে ‘কইরাল’ গ্রামের কাছে ধলেশ্বরী নদীতে মিলিত হয়েছে। খোয়াই একসময় খরস্রোতা নদী ছিল। উজানে ভারতের পানি সীমিতকরণ, প্রভাবশালী মহলের দখল, ড্রেজিং না হওয়া ইত্যাদি কারণে নদীর ধারা দিন দিন ক্ষীণতর হয়ে যাচ্ছে। অথচ এই নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলার কৃষি ও বাণিজ্যের বিশাল একটি অংশ।

খোয়াই হবিগঞ্জ শহরবাসীর জন্য দুঃখ হিসেবে খ্যাত ছিল। বর্ষাকালে অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হবিগঞ্জ শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত খোয়াই ভয়াবহ রূপ ধারণ করত। বিগত তিন যুগেও শাসনকৃত নদীতে সরকার ড্রেজিং কিংবা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

সুষ্ঠু পরিকল্পনা এবং অসচেতনতার জন্য নদীটির নাব্যতা শুধু হ্রাসই পায়নি বরং নদীনির্ভর জীবনযাত্রাকেও বিপন্ন করছে। কোথাও কোথাও শহর থেকে ১২-১৫ ফুট উঁচুতে উঠে গেছে নদীর তলদেশ। ফলে শহরটি হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ।

সর্বশেষ খবর