বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সমস্যা দুই সেতুর টোল প্লাজা

শিমুল মাহমুদ

সমস্যা দুই সেতুর টোল প্লাজা

দেশের লাইফলাইন হিসেবে পরিচিত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে যানজটের দুর্ভোগ দীর্ঘায়িত হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে টানা যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন যাত্রীরা। গতকালও দুপুরের দিকে দাউদকান্দি টোল প্লাজার ধীরগতিতে প্রায় ১ কিলোমিটার যানজটে পড়েন যাত্রীরা। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, চার লেনের মহাসড়কে দুই লেনের দাউদকান্দি ও মেঘনা-গোমতী সেতু এবং টোল প্লাজায় অব্যবস্থাপনা ও ধীরগতির কারণে দুটি সেতুর দুই পাশে যানজটের দুর্ভোগ নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেঘনা-গোমতী সেতু ও দাউদকান্দি সেতুর টোল প্লাজায় অতিরিক্ত অর্থ আদায়, পরিমাপে ধীরগতির কারণে যানজট ছড়িয়ে পড়ে দীর্ঘ মহাসড়কে।

অন্যদিকে উল্টোমুখী গাড়ির চলাচল ও মহাসড়কটির মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, দাউদকান্দি, চান্দিনা, নিমসার, পদুয়ারবাজারসহ বিভিন্ন অংশে অবাধে অটোরিকশা, রিকশাভ্যান, এমনকি ট্রাক্টরও চলাচল করে। এসব যানবাহন হুট করে উল্টো পথে সামনে এসে পড়ে। সেতুতে যানজটে আটকে থাকা যানবাহন সেতু পেরিয়েই শৃঙ্খলা ভেঙে পরস্পরকে ডিঙিয়ে যেতে চায়। তখন মহাসড়ক নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে।

মহাসড়কটির ঢাকা-কুমিল্লা অংশে সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া, দাউদকান্দি, কুমিল্লার চান্দিনা, নিমসার, ইলিয়টগঞ্জ, কাবিলা, ক্যান্টনমেন্ট, আলেখারচর বাজার, পদুয়ারবাজারসহ ছোট-বড় অনেক বাজারের কারণে থমকে যায় চলমান গাড়ির গতি। এসব বাজারের বেশ কয়েকটিতে সকালে সবজির ট্রাকে মালামাল ওঠানো ও নামানোর কারণে যানজটের সৃষ্টি হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটির চার লেনের নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৬ সালের ১ জুলাই খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু চার লেনে উন্নীত হওয়ার কারণে যে সুফল পাওয়ার কথা তা পাওয়া যাচ্ছে না। বরং অব্যবস্থাপনার কারণে এই সড়ক ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ অনেক বেড়েছে। চার লেনের মহাসড়কে দাউদকান্দি ও মেঘনা-গোমতী সেতু দুই লেন হওয়ায় এবং টোল প্লাজার ধীরগতির কারণে নিয়মিতই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানবাহনগুলো চার লেন থেকে দুই লেন সেতুতে ওঠায় গতি ব্যাহত হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) ২০১৫ সালের শেষ দিকের হিসাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দিনে গড়ে (অ্যানুয়াল অ্যাভারেজ ডেইলি ট্রাফিক-এএডিটি) ২৩ হাজার ২৭২টি যানবাহন চলাচল করে। এর মধ্যে মোটরাইজড ২১ হাজার ৯৬১টি এবং নন মোটরাইজড ১ হাজার ৩১২টি। তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি চার লেন হওয়ার পর তিন থেকে চার হাজার বেশি যানবাহন চলাচল করছে। ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে শুধু লেন বাড়িয়ে ও নতুন সেতু নির্মাণ করে মহাসড়কের যানজট সামাল দেওয়া যাবে না বলে মনে করেন তারা।  উল্লেখ্য, মহাসড়কের কাঁচপুর, দাউদকান্দি ও মেঘনা গোমতী সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। স্টিল স্ট্র্যাকচারের তিনটি সেতু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে চালু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানান, সেতু তিনটি নির্মাণ হলেও মহাসড়কে বিদ্যমান প্রায় অর্ধশতাধিক বাজার অপসারণ, ছোট গাড়ি নিয়ন্ত্রণ, উল্টোমুখী গাড়ি চলাচল বন্ধ ও স্লো মোভিং যানবাহনের জন্য আলাদা লেন তৈরি না করলে যানজটের সমাধান আসবে না। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল বাশার খান বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিশৃঙ্খলা আগের চেয়ে অনেকে বেড়ে গেছে। শুক্রবার কুমিল্লা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে ১০ ঘণ্টা সময় লাগে রাস্তায়। এমন ভয়াবহ যানজটে আর কখনো পড়িনি। অথচ দুই লেন থাকার সময়ও আমরা দেড় ঘণ্টায় ঢাকায় আসতে পারতাম।  দাউদকান্দি হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, টোল দিতে গিয়ে সময় একটু বেশি লাগায় টোল প্লাজায় জট লাগছে। তবে এর চেয়ে বড় সমস্যা দুই লেনের সেতু। চার লেনের মহাসড়ক পেরিয়ে দুই লেনের সেতুতে এসে যানবাহন ধীরগতির হয়ে পড়ে। ফলে মাঝে মাঝেই যানজটে পড়েন এই মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা। যানজট নিরসনে মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতা রয়েছে। গতকালও প্রায় ১১ হাজারের বেশি গাড়ি এই মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে একদিকে যাতায়াত করেছে। শুক্র ও শনিবারসহ ছুটির দিনে এই সংখ্যা ১৩ হাজার পেরিয়ে যায়। প্রতিদিন উভয় দিকে চলাচলকারী গাড়ির সংখ্যা ২৬ হাজারের বেশি। পরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে, মহাসড়কে লেন যত বাড়ানো হবে গাড়ির সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে। ঢাকায় প্রতিদিন ২০০ গাড়ি রাস্তায় নামছে, মাসে ৬ হাজার। চট্টগ্রামেও গাড়ি বাড়ছে। সেই গাড়ি মহাসড়কে আসছে। তিনি বলেন, দেড় বছর আগে চার লেন হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। কিন্তু বাড়তি গাড়ি থমকে যাচ্ছে দুই লেনের সেতুতে এসে। সেখান থেকেই যানজটের শুরু। ব্রিজ থেকে নেমে গাড়ির ড্রাইভাররাও প্রতিযোগিতা করে কে কার আগে যাবে। এ জন্য ছোট গাড়ি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মহাসড়কের দুই পাশের হাটবাজারগুলো সরিয়ে দিতে হবে দ্রুত। হাইওয়ে পুলিশকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে আরও কার্যকরভাবে সড়কে রাখতে হবে। উল্টোদিকের যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া অটোরিকশা, ঠেলা, রিকশা, নসিমন চলাচল বন্ধ করতে হবে অথবা তাদের জন্য পৃথক লেন করে দিতে হবে। টোল প্লাজার আধুনিকায়ন করতে হবে। কারণ, পণ্যবাহী যানের টোল আদায়ে অনেক সময় চলে যায়।

সর্বশেষ খবর