বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

গাজীপুরে লবিংয়ে ব্যস্ত দুই দলের প্রার্থীরা

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

গাজীপুরে লবিংয়ে ব্যস্ত দুই দলের প্রার্থীরা

তফসিল ঘোষণার পর গাজীপুর সিটি নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠতে শুরু করেছে। তবে নগরবাসী মনে করছেন দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হলেই প্রচারণা বেড়ে যাবে। গাজীপুর সিটিজুড়ে এখন একই আলোচনা— কে হবেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী। আর এ আলোচনা চা স্টল থেকে শুরু করে হাট-বাজার, অফিস-আদালতেও চাউর হচ্ছে। তবে নগরবাসী এলাকার উন্নয়নকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। যিনিই নৌকা বা ধানের শীষ পান না কেন, প্রার্থী যদি যোগ্য হন তবে ভোট দেবেন বলে জানান সাধারণ ভোটাররা।

ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ জেরিনা সুলতানা বলেন, রাজধানীর পাশের গুরুত্বপূর্ণ শহর গাজীপুর। এখানে কাঙ্ক্ষিত কোনো উন্নয়ন হয়নি। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে পানি জমে থাকে। নেই কোনো ড্রেনেজব্যবস্থা। আমরা চাই এবারের সিটি নির্বাচনে একজন দক্ষ-যোগ্য মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগরবাসীর আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবেন। এদিকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে দৌড়ঝাঁপ। এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে চলছে প্রচারণা। তবে দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা এখন কেন্দ্রে দৌড়াদৌড়ি করছেন বলে জানা গেছে। তবে দলীয় মনোনয়ন খুব শিগগিরই নিশ্চিত হতে পারে বলে জানান দুই রাজনৈতিক দলের একাধিক শীর্ষ নেতা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নগরীতে চলছে কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ঘরোয়া বৈঠক। এর বাইরে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে হয়েছে খণ্ড খণ্ড মিছিল। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে তৎপরতা বেশি দেখা গেলেও বিএনপির মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নেই তেমন তোড়জোড়। গতকালও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য তিন মেয়র প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতাদের মন জয় করতে ছিলেন ব্যস্ত। এদিকে নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মেয়র পদে তিনজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৩৬ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৩৬ জন মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে জেলা বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার, জামায়াতে ইসলামীর গাজীপুর মহানগর আমির মো. সানাউল্লাহ, ইসলামী ঐক্যজোটের কেন্দ্রীয় নেতা মো. ফজলুর রহমান রয়েছেন। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম, মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল হাসান সরকার রাসেলসহ অন্য সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা গতকাল ছিলেন দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরাও বিকাল থেকে অবস্থান করছেন গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে। এর মধ্যে বর্তমান মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, কেন্দ্রীয় নেতা হাসান উদ্দিন সরকার, জেলা বিএনপি নেতা শওকত হোসেন সরকার রয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে সম্ভাব্য অনেক মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী নগরের অলিগলির দেয়াল, বিদ্যুতের খুঁটি এবং রাস্তার দুই ধারে অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টার সাঁটিয়েছেন। অথচ তফসিল ঘোষণার পর প্রার্থীদের নিজ উদ্যোগে এসব নামিয়ে ফেলার কথা। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। কিন্তু প্রার্থীদের পক্ষ থেকে তেমন কোনো সাড়া না পাওয়ায় অবশেষে এসব বিলবোর্ড, ব্যানার ও আগাম প্রচারসামগ্রী উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে নামে খোদ নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলা, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভূমিকা প্রত্যাশা করছে সচেতন মহল। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) গাজীপুর সভাপতি অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক জানান, রংপুর ও কুমিল্লা সিটি নির্বাচন এবং সম্প্রতি গাজীপুর সদরে অনুষ্ঠিত তিন ইউপি নির্বাচনে প্রশাসনের ভূমিকা ছিল ইতিবাচক। সিইসি সুষ্ঠু নির্বাচনে সক্ষমতা দেখিয়েছে। গাজীপুর সিটিতেও অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে বলে তিনি প্রত্যাশা করছেন। গাজীপুর সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে জেলা বারের সভাপতি ও গাজীপুর ল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মো. আবদুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচনে ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। ভোটাররা একজন সৎ, কর্মঠ ও যোগ্য মেয়র প্রার্থীকে নির্বাচিত করবেন— এমনটাই প্রত্যাশা করছেন তিনি।

সর্বশেষ খবর