বৃহস্পতিবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভাটারায় জমি দখলের চেষ্টায় আনসার বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ভাটারা এলাকায় নিরীহ মানুষের ওপর হামলা করে জমি দখলের চেষ্টা করে আনসার বাহিনীর কিছু সদস্য। গতকাল সকালে আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঁটাসহ নানা অস্ত্র সজ্জিত আনসার সদস্যদের এই হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন। স্থানীয় মানুষের ওপর হামলা ও তাদের প্রতিরোধের সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। খবর পেয়ে দ্রুতই ঘটনাস্থলে হাজির হয় ভাটারা থানার পুলিশ। স্থানীয় জনতার তোপের মুখে এবং পুলিশের হস্তক্ষেপে একপর্যায়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হয় হামলাকারী আনসার সদস্যরা। বৈধ মালিকসহ সাধারণ মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলার ঘটনায় রীতিমতো হতবাক সচেতন মানুষ। তারা আনসার সদস্যদের কাণ্ডজ্ঞানহীন দখলদারির প্রচেষ্টায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

এলাকাবাসী বলছেন, যেখানে আনসার বাহিনীর সদস্যদের মানুষের জানমাল নিরাপত্তা দেওয়ার কথা, সেখানে তারা জমি দখলে নেমেছে। তাদের এমন আচরণে তারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আনসার সদস্যরা জমি কিনেছে বলে দাবি করলেও বাস্তবে তারা তা কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারছে না। কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রয়োজনে যে কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি সরকারিভাবে অধিগ্রহণ করতে হয়। এখানে কোনো জমি আনসার বাহিনীর জন্য অধিগ্রহণ করা হয়নি। আর আইন অনুযায়ী তারা আলাদাভাবে সাধারণ মানুষের জমি ক্রয় করতে পারেন না। সরেজমিন বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, জমির মালিকদের সঙ্গে এলাকাবাসী একাত্মতা প্রকাশ করে অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে আনসার বাহিনীর সদস্যরা মারমুখী অবস্থান নেয়। উভয় পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত এ উত্তেজনা বিরাজ করে। এরই মধ্যে আনসার বাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় কিছু জমির মালিকদের ওপর হামলা চালায়। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে আনসার বাহিনীর সদস্যরা দুটি তাঁবু রেখেই ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। আহত মোসাদ্দেক ইসলাম আশিক জানান, বেলা ১১টার দিকে আনসার বাহিনীর শতাধিক সদস্য ১৬০১ ও ১৬০২ দাগের জমিতে আসে। তারা সেখানে দুটি তাঁবু টাঙায়। এর পাশেই আমি অবস্থান করছিলাম। আনসার সদস্যরা মনে করেছে আমি বিষয়টি ভিডিও করেছি। তাদের কয়েকজন সদস্য দৌড়ে এসে আমাকে বেধড়ক মারধর করে। আমাকে বাঁচাতে কয়েকজন এগিয়ে এলে তাদেরও মারধর করা হয়। জমির মালিক আজিজুর রহমান জানান, দীর্ঘদিন ধরে ১৬০১ ও ১৬০২ দাগের চারটি প্লট আমাদের দখলে রয়েছে। সকালে আনসার বাহিনীর শতাধিক সদস্য ওই জমি রামকৃষ্ণ নামে এক ব্যক্তির বলে দখলে নেওয়ার চেষ্টা করে। তারা সেখানে দুটি তাঁবু টাঙায়। আমি জমিটি আমার বলে তাদের জানাই। কিন্তু আনসার সদস্যরা বলে, আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। ভাটারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি নজরুল ইসলাম ঢালী জানান, জানমাল নিরাপত্তা রক্ষার বিপরীতে আনসার বাহিনীর সদস্যরা সাধারণ মানুষের জমি দখলে নেমেছে। এটি উদ্বেগের বিষয়। একের পর এক তারা সাধারণ মানুষের জমি দখলের চেষ্টা করছে। কেউ বাধা দিলেই তার ওপর নির্যাতনের খড়গ নেমে আসছে। স্থানীয় দেলোয়ার হোসেন জানান, আনসার বাহিনীর সদস্যদের বেপরোয়া আচরণে আমরা ক্ষুব্ধ। আহত ও স্থানীয়রা জানান, আনসার বাহিনীর সদস্যদের ন্যক্কারজনক হামলার পর জমির মালিক ও এলাকাবাসী এক জোট হয়ে যায়। অপরপক্ষে আনসার বাহিনী শতাধিক সদস্য অবস্থান নিলে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। খবর শুনে ভাটারা থানার এসআই কে এম জিয়াউল আলম ঘটনাস্থলে এলে আনসার সদস্যরা তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। পরে ভাটারা থানার ওসি এস এম কামরুজ্জামানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। আনসার সদস্য ওসমান গনি দাবি করে, এখানে তেমন কিছু হয়নি। আমরা নিজেদের জমি, নিজেরা দখলে নিতে এসেছি। ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখছি। দুই পক্ষকে নিয়ে রাতে থানায় বসার কথা রয়েছে। এদিকে জমির মূল মালিকরা রাতে থানায় গেলেও আনসারদের পক্ষ থেকে কেউ যায়নি।

সর্বশেষ খবর