বুধবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা
উত্তেজনা বাড়ছে সিটি ভোটে

এক সপ্তাহ আগে সেনা চায় বিএনপি, নাকচ ইসির

নিজস্ব প্রতিবেদক

গাজীপুর-খুলনা সিটি করপোরেশনে ভোটের এক সপ্তাহ আগে সেনা মোতায়েন, ইভিএম ব্যবহার না করা ও গাজীপুরের এসপি প্রত্যাহারসহ নির্বাচন কমিশনের কাছে ২০ দফা দাবি পেশ করেছে বিএনপি। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এবং চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিএনপির পক্ষ থেকে এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ও ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার বন্ধে বিএনপির দাবি নাকচ করে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল গতকাল নির্বাচন ভবনে গিয়ে সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বেলা ১১টার দিকে নির্বাচন ভবনে যান। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, দলের যুগ্মমহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন ও বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার। প্রায় দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠক শেষে খন্দকার মোশাররফ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে দুই সিটি করপোরেশন নিয়ে একগুচ্ছ লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। কমিশন বিষয়গুলো বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছে। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে অবশ্যই মুক্তি দিতে হবে। তাকে মুক্তি না দিলে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে না। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে সাধারণ ভোটাররা ভোট দিতে পারছেন না। নির্বাচনের ওপর ভোটারদের আস্থা নেই। সেনা মোতায়েন হলে এই নির্বাচনে ভোটারদের আস্থা ফিরে আসবে। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিরোধিতার কথা জানানো হয়েছে কমিশনকে। ইভিএম-প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ। যেসব দেশের নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে, সেসব দেশেও এর ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বৈঠকে দুই নির্বাচন সামনে রেখে কমিশনের নির্দেশে বিভাগীয় কমিশনারদের নেতৃত্বে দুটি সমন্বয় কমিটি গঠন নিয়েও প্রশ্ন তোলে বিএনপি। সংসদ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এ নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে মানুষের মাঝে উৎকণ্ঠা রয়েছে। সবাই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। জাতীয় নির্বাচনের আগে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা, এ দুটি নির্বাচনে তার ইঙ্গিত থাকবে। এদিকে ভোট কেন্দ্রগুলোয় আনসার ও ভিডিপি মোতায়েনে সতর্ক থাকতে ইসির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। নিজ এলাকায় যেন ওই বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব না পান, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কমিউনিটি পুলিশের দায়িত্ব পালনকারীদের নির্দিষ্ট পোশাকের ব্যবস্থা করতে ইসিকে বলেছে বিএনপি।

 নির্বাচনী প্রচারে সমান সুযোগ সৃষ্টি করারও দাবি জানিয়েছে দলটি। বিএনপি দাবিতে বলেছে, গাজীপুরের বর্তমান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনে ‘পক্ষপাতিত্বের’ কারণে কমিশন তাকে একবার প্রত্যাহার করেছিল। ‘তার মতো’ সিভিল প্রশাসন ও পুলিশের ‘চিহ্নিত কর্মকর্তাদের’ বদলি করে ‘পেশাদার’ কর্মকর্তা দিতে হবে খুলনা ও গাজীপুরে। উল্লেখ্য, জাতীয় নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনেও বিএনপি সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা নিজেও সম্প্রতি বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েন হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তিনি সেনা মোতায়েনের পক্ষে নন। ১৫ মে ভোটের দিন রেখে দুই সিটির নির্বাচনের যে তফসিল নির্বাচন কমিশন দিয়েছে, সে অনুযায়ী মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ এপ্রিল। ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, কিছু প্রস্তাব কমিশন আইনানুগভাবে বাস্তবায়ন করবে বলে জানিয়েছে। বিশেষ করে ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, নিরপেক্ষ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ, পর্যবেক্ষকদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করাসহ অনেক সুপারিশ ইতিবাচকভাবেই বিবেচনা করা হবে। তবে ইভিএম, সেনা মোতায়েন ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের দাবির বিষয়গুলো নিয়ে পরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বিএনপিকে বলেছে কমিশন। স্থানীয় নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের কোনো পরিকল্পনা ইসির নেই। ইভিএমের মতো প্রযুক্তি আইনানুগভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় নির্বাচনে। গাজীপুরের এসপির বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, তার বিষয়ে বৈঠকে তাত্ক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি ইসি। এসব বিষয় আইন-বিধির সঙ্গে যুক্ত। বিতর্কিত কর্মকর্তাদের নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তা নিয়ে কমিশন পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবে বলেন হেলালুদ্দীন।

সর্বশেষ খবর